সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা

বর্ণা চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা
ভোগ

মেটে সিদুঁর মাখা মেয়েটির মুখ
উনুনের ধারে ধুয়ে রাখে চাল,
ঠিকানা হীন কালসিটে...
কালো ক্যানভাসে উঁকি মারে চাঁদ।
ছুঁয়ে যায় সাদা বেড়াল। কালো বেড়াল।
নিশ্চুপ
একতারা বাজে
মেঠো পথ, চলতে চলতে অন্ধকার নামে
পায়ের নীচে ছিন্ন চাঁদমালা
সে মুখ সরায়।
ঠোঁটের চারপাশে জমে নুন।
ফুটে ওঠে চাল,
উড়ো ছাই,
তুমি কি আজো চিনতে পারো না তাকে?
সে তো বেড়ে রাখে রোজ,
কলাপাতায় নারায়ণের প্রসাদ!

অলিখিত জার্নাল ১

উড়ে আসা পাতার মতো কিছু মুখ
সন্ধের আলো খুঁজে ভিড় করে চৌরাস্তায়,
কত আনন্দ, শোক
আজকাল মনে আসে না আর কিছুই।
রূপোলি আলো চকচক করে।
রূপকথার ট্রেনে এসে থামে। তৈরী না হওয়া একটা ব্রীজের পাশ দিয়ে হু হু করে ছুটে যায়, বিগত আট ন বছর ধরে।

ততদিনে মারা গেছে মা। স্তন বাদ পড়ার সময় শুধু একবার কেঁদেছিল আয়না দেখে। তারপর থেকে
আটমাস চাঁদের দিকে তাকায়নি আর।
আমার বাংলা টিচার বুঝিয়েছিল,
খুব শীতে থমকে যায় নদী।
তুমি তখন বসন্তে নুইয়ে পড়া মালতীলতা
শালিখের মতো একলাফে জানলায় এসে বসেছিলে।
রোদ পড়েছিল, উড়েছিল চুল,
ট্রেনটা থেমেছিল হঠাৎ ব্রীজের পাশে।
গোটানো হাত, বাড়িয়ে দিলে।
চেয়েছিলাম,
আবার নাম না জানা সুড়ঙ্গপথে হু হু করে ছুটে যাব।
ভেঙে গেল চশমার কাচ। কত ধুলো,
জড়ো হওয়া শুকনো পাতা। বারান্দায় অমবস্যা রাত।
শুধু দূর থেকে ভেসে আসা একটা অদেখা ট্রেনের শব্দ
মিলিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ, ছুঁয়ে ফেলার আগেই!

অলিখিত জার্নাল ২

শ্মশানের ঘাট থেকে ভেসে আসে কুকুরের ডাক। মাথা ঝিম ঝিম করে। কত ছাই জড়ো হয় শোকের ভেতর। গনগনে চুল্লীর হাওয়া, উড়িয়ে নিয়ে যায়, পিছুটান।
মাথার ভেতর শব্দ হয় জোরে। দৃশ্য বদলায়। সমস্ত অনুভূতি দিয়ে তোমায় ডাকি। অবজ্ঞা করে চাঁদ। মুখে এক বিকৃত হাসি । যতবার কথা হয়েছে, ভেবেছি বদলে গেছ।
অথচ একলা দুপুরে মৃত্যুও সুযোগ নিয়েছে আরো।

চলে যায় ট্রাম। বাদামের খোসা, পায়ের নীচে কচলায়। তারপর সোজা এক খাদ,  হু হু হাওয়া।
কুকুরের ডাক আসে। নিমফুল বিছানো পথে এগিয়ে চলে আগুন।
ডোমের ছেলে কি সত্যিই জানে কোথায় আদপে মুক্তির পথ?



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন