শক্তি কুম্ভকার-এর কবিতা

শক্তি কুম্ভকার-এর কবিতা



বানানো মূর্তির হাতে

প্রত্যেকটা নিষ্কর্মা দিন পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়েছে
আমরা কি বাতাসে সাঁতারাতে সাঁতরাতে এগোব?
প্রতিদিন আমরা পাখি আর গাছভর্তি একটা দ্বীপ দেখতে চাই
পাথরে চোখ থেকে স্বপ্নেরা বেরিয়ে এসে অস্ত্রের ডগা ভেঙে দিয়ে যাক
আমরা রক্ত চেটে দেখে নিয়েছি, কুকুরকে পাথর ছুঁড়ে মেরেছি অনেক
এবার একটা স্বচ্ছ জলের নদী বয়ে যাক
এই দ্বীপে, যেখানে শুধু পাখি আর গাছ
জীবন্ত পাথরের মুখ থেকে ফার্ণের মতো ঝুলে থাক দাড়িগোঁফ,
আমরা চাইনা কোন বানানো মূর্তির হাতে ধরা থাক কালাশনিকভ।

                 
জলের বোতলে চেপে দেশ ভেসে চলে গেছে

এই খাল দিয়ে বয়ে যায় আবর্জনার নদী
আমাদের শৈশব মুখবন্ধ পলিব্যাগে ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে এখানেই
প্রতিদিন তাকেই খুঁজতে ফিরে ফিরে আসি
এখানেই দেশের জন্ম আমি দেখে নিয়েছি
আবর্জনার নদীতে পোকা হয়ে আমাদের দেশ ভেসে থাকে
সেনারা চাঁদের আলোর নীচে সীমান্ত পাহারা দেয়
তারা জানে না ফেলে দেওয়া জলের বোতলে চেপে দেশ ভেসে চলে গেছে।
                                

 
সরবত
 
সরবতে সব মিশে যাচ্ছে
মানুষের রক্ত, আমাদের অতীত, তামার পয়সা
সবাই রাস্তা খুঁজছে ঢুকে পড়ার, ফিরে আসার
রাস্তা তো একটাই, গোল সুড়ঙ্গের মুখ
ফুলের ঋতুতে গাছেরা যেমন কাছে ডাকে
পাঁচ মেয়ে সুড়ঙ্গের ভেতরে ডেকে নিয়ে যায়
সেখানে জমে থাকা স্বচ্ছ জলের তলায় প্রাচীন তামা পয়সা পড়ে আছে
অতীতের রক্ত পাথরের গা বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা নামছে জলের কাছে।
                    

 
মোহ ছেড়ে চলে যেতে হবে

 
ঘৃণার ভেতর বড় হতে শেখো এবার
অনেকদিন ঘরের কোণ আঁকড়ে পড়ে ছিলে
ছিপ ফেলে পুকুর পাড়ে বসে দেখেছো হাওয়ায় নড়ে ফাতনা
স্বচ্ছ জলের ভেতর মাছ খেলা করে
এইসব মোহ ছেড়ে চলে যেতে হবে এবার
মাছেদের শহর ছেড়ে গিয়ে ছিপ ফেলে বসো ডাঙায়
যেখানে রোদের ভেতর ছায়ারা দৌঁড়ায়
সবার অলক্ষ্যে চারাগাছ বড় হয়ে উঠে।

             
জানালা থেকে আমরা ইতিহাস দেখে ফেলি

 
জানালার কাছে বসে দেখি আশ্চর্য্য হওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে
নিজেকে আড়াল করতে তোমাদের প্রতিটা শিক্ষাই বেশ কাজে লাগে
কখনো বক সেজে তেতুল গাছের উপর দল বেঁধে বসি
কাকের প্রতিভা নিয়ে কখনো ছাদের কোণায় চেঁচিয়ে ডাকি
নরম বিছানায় ঘুমে কাদা আমাদেরই বাড়ির শিশু
এর বেশি যতটুকু তোমরা জলকাদা দেখিয়েছ রাস্তায়
তার উপর চলে গেছে চাকার দাগ, নৌকা, স্টিমার
তবু মানুষের পায়ে হেঁটে বাড়ি খুঁজে ফেরার রাস্তায়
জানালা থেকে আমরা ইতিহাস দেখে ফেলি।

          
 
আমাদের ভাতের হাঁড়ি খুব ছোট

 
কিছু শব্দের মায়া আমরা কখনো ছাড়তে পারি না
এইভাবে পৃথিবী ছোট হয়ে আসে ক্রমশ
কাকে কীভাবে তাড়িয়ে দিতে হয় আমরা জানি
কার নাম সারাদিন বাজবে কানে তাও জানা থাকে
এর বেশি শব্দ আমাদের শেখা নেই
চার দেওয়াল টপকালে ভালোবাসাকেও আর ধরা যায় না
তাই আমাদের ভাতের হাঁড়ি খুব ছোট
আমাদের ঘর, বিছানা আমাদেরই মতো ছোট।
            

২টি মন্তব্য:

  1. কত মায়াময় উপাদেয় সরবৎ দীর্ঘল জীবন ফুটছে ভাতের হাঁড়িতে। ধন্যবাদ কবি।

    উত্তরমুছুন
  2. সুন্দর লেখা। প্রাণবন্ত, ব্যঙ্গত্মক বিষাদময়।

    উত্তরমুছুন