সুদীপ চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা
সহমরণ
১জানলার মাপে এইসব চৌকো চৌকো জ্বর
রেখেছ নিজের দেয়ালে
চোখ বহির্ভূত কোনও গ্রাম্য সকালে
বিধাতা এসেছেন, পাশে সূর্যাস্ত রঙের ঘোড়া
তোমার নিজস্ব আস্তাবলে তখনও ইতস্তত
নীল মাছিদের ডানার কোলাহল
যাবে কি যাবে না, ভেবে, বাড়িয়েছ দুইহাত দুই দিকে--
একই সঙ্গে উদয় ও অস্ত হচ্ছে
পৃথিবীকে মাঝখানে রেখে
২
সাদা অস্থিরতা, একরাশ তুলোর মতো জুবুথুবু
তোমার পায়ের কাছে
যেন কুকুরের তাড়া খেয়ে এই গ্রীষ্মের দুপুরে
সে আশ্রয় চেয়েছে, শরীরে, নিভৃতে
অথচ বিগত কয়েকদিন তোমার ভেতরে
বয়ে গেছে দুর্যোগ
মন ফেটে তৈরি হয়েছে খরস্রোতা নদী
দেহের আনাচে কানাচে যে-ক'টি বাসভূমি
যত্নে গড়েছিলে
ভেসে গেছে অনায়াসে
ভীত অস্থিরতা হাতে তুলে
এখন অন্ধকারে বসে আছ
ছড়ানোছিটোনো ধ্বংসের ভিতর
সে মুখ তুলে দাঁতে কাটছে তোমার নরম শোক
দূরে ওই জঙ্গলে একে একে জ্বলে উঠছে
সমস্ত পরাজিত মানুষের চোখ
৩
জলের প্রারম্ভে যাই
দেখি, জল নয়, হারানো বন্ধুর মুখ অতীব তরল
ভাষা খুব সংক্রমণ প্রিয়, ভাষা খুব দেহের অতীত
দিনশেষে, নতমুখে, দু'একটা শব্দের কাছে দাঁড়ানো ছাড়া
কিছুই পারিনি আমি
এমন ব্যর্থতায় হেসে ওঠে উত্তরের হাওয়া
শিথিল হয় ঘর্মাক্ত মুঠি
জলের অন্তিমে যাই
দেখি জল নয়, নীলাভ তরল থেকে জেগে ওঠে
বন্ধুর ভ্রূকুটি
৪
টুকিটাকি তোমার সংসারের নাম
ছলছল তোমার গৃহস্থালি
তারপর বহুদিন হল পৃথিবী নিরুদ্দেশ ছিল
কোনও গোপন গুহায় ওই সুদূর আকাশে
অবশেষে পাওয়া গেলে তাকে প্রলয়ের আগে
মৃতপ্রায় তারার ভেতর, ঘাসের জঙ্গলে
কোঁচকানো মুখ, অথর্ব চেহারা
বাঁ-হাতে বাঁকানো সময়দণ্ড
তার জীর্ণ ঝুলিতে তোমার টুকিটাকি সংসার
চোখে ছলছলে গৃহস্থালি
৫
পড়ে-থাকা হাড়ের টুকরো থেকে অসম্ভব হেসে উঠল খিদে
তাকে বুকে নিয়ে এই রাস্তা সারা শহর ছড়িয়ে পড়েছে
রঙিন মানুষের ভিড়ে মাঝে মাঝেই ভেসে উঠছে
ওই সাদা হাড়--রেস্তোরাঁয়, শপিংমলে
অথবা নিভৃতে, রাতের মখমল শয্যায়
দুজনের গোপন অবিশ্বাসে
আর অমনি কী তীব্র হাসি
পৃথিবীর প্রতিটি শূন্য পেট ওই হাড় মুখে নিয়ে
ঢুকে পড়ছে আমাদের যে-কোনো রকম খাদ্যাভ্যাসে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন