সৈকত ঘোষ-এর কবিতা
আর্যসত্য ও প্রাচীন ম্যান্ডোলিন
সপ্তম অবয়ব
এভাবে
বিতর্ককে উসকে দিতে নেই,
এভাবে
হাত পেতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে নেই
একদিন চোখ খসে পড়বে, কূল
হারিয়ে ফেলবে কিনারা।
একদিন আপেল শহরে ফুটপাতে
বসে যাবে ক্লাসরুম।
এখনও কি নিশ্বাস নিতে কষ্ট
হয়?
কার্ডিয়াক জোনে সুন্দরী
বিজ্ঞাপন।
তুমি সমাধান খোঁজো,
ধ্রুপদী সেতুর ওপারে স্ট্রিম
অফ কন্সিয়াসনেস।
আমি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে
নিজেকে সাজিয়ে নিই,
যেভাবে এমব্রয়ডারি মগজে
ভরে নেয় মুক্ত আকাশ।
আমি ভ্যাকেশন মানে ফুসফুস,
ফৌজদারি মানে আড়াই চাল।
মধ্যরাতে ফ্যাতাড়ুরা শহর
দখল করে,
বৃদ্ধ কামান শরীরে ভরে
নেয় জাঙ্কফুড।
এবার তো কিছু একটা হবেই-
তোমার ডান হাত ভুলে যায়
বাম হাতের কথা।
একেই কি মধ্যপন্থা বলে?
আমি কবিতার দেশে দরজা খুলে
দাঁড়াই।
রাষ্ট্র আজীবন মিথ্যে কথা
বলে।
ঘুম পাড়িয়ে রাখে কাল্পনিক
ঈশ্বরতত্ত্ব।
আমি স্বপ্নে রবীন্দ্রনাথ,
বুঝি কীভাবে উগ্র জাতীয়তাবাদ
শিকড় থেকে উপড়ে নেবে ঘুম।
কীভাবে সাব-অলটার্ন জ্বালিয়ে
দেবে মাথার ডিজেল।
আমি কল্পিত চোখ রাঙানি
উপেক্ষা করে
জীবনের ঘনত্ব খুঁজে পাই।
সে তো নদী রঙের মেয়ে, সেই
তো মৃত্যুর মনিকর্নিকা।
আমি তোমার জন্ম শব্দে খুঁজে
পাই নাগরিক এপিটাফ।
তুমি যাকে ঈশ্বর বলে জানো,
সে তোমার সেলাই দিদিমণি
অষ্টম অবয়ব
কোনো কিছুই শেষ হয়ে যায় না,
অস্ফুটে চোখের সামনে হেঁটে আসে প্রাচীন আলো-বাতাস।
শেষ পর্যন্ত একটা নতুন
শুরু। সেখানেও আদিম গন্ধ লেগে থাকে। স্বপ্নের মেনুকার্ড মুছে দেয় অনুশীলন পর্ব। এ সবকিছুই
তার উপস্থিতি। এ সবটুকুই বায়োলজিকাল।
দূর থেকে মহীরুহ দেখা যায়।
প্রতীক চিনে নেয় ভুল।
আসলে ভুলের কোনও পূর্বরাগ
হয় না। হয় না উত্তর ইতিহাস।
নিজের মধ্যে বুঁদ হয়ে যায়
স্বপ্নচারী ঐরাবত।
ইতিহাসের চারি ধাম, আকর্ষণীয়
গম্ভীর।
নিখুঁত বিরহপর্ব শেষে এগিয়ে
দেয় পঞ্চব্যাঞ্জন।
জন্ম ঝড়ে পরে টুপটুপ,
একাকী জন্মান্তর হঠাৎ গজিয়ে
ওঠা ঘুমন্ত নগরী
কিংবা নামহীন ঈশ্বরতত্ত্ব...
তুমি প্রতীক মানে কি বোঝো
জানিনা!
সবটুকুই বিশ্বাস, বিশ্বাস
মুছে দেয় কাঁটাতার।
যুদ্ধের শেষে পড়ে থাকে
অক্ষর, অনুচ্চারিত কান্না।
কান্নার কোনও রং হয় না,
দেশ হয় না
ঈশ্বর বদলে যায়, বদলে যায়
প্রচ্ছদ।
মানুষ কাঁদে,
মানুষ জন্ম নেয়
তুমি তাকে নামহীন করেছো,
অথবা তুমিই সেই পরিচয়।
যা কিছু গোপন, যা কিছু
সুন্দর
যুগ যুগ ধরে কুড়িয়ে নিয়েছি
আমি
হে প্রাচীন দ্বারকা নগর,
হে বন্ধু ঈশ্বর
তোমার বাঁশিতে জেগে ওঠে
কাফের,
জ্বলে ওঠে রঙিন শরীর।
সমস্ত চিহ্ন মুছে যায়,
এ সবই মাধুরী তোমার
তোমার ডানায় ম্যাজিক পালক।
বিশ্বাসের কোনও সূর্যাস্ত
নেই,
বিশ্বাস আমাদের জুড়ে রেখেছে
এত বছর।
আমাদের মায়ার সংসার,
আমাদের মাথার ওপর আকাশ।
মানচিত্র, সে তো অভিসার
মাত্র
যেভাবে ভালোবাসা এসে দাঁড়ায়
চৌকাঠে
যেভাবে আপেল শহরে ঘুম ভাঙে
নদীর
এসো, মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিই
ট্রাফিক থেকে পিছলে যাক
সময়।
সময়ের ডাকনাম তুমি নিজে,
আর আমি তোমার বাই প্রোডাক্ট।
এসো, আকাশের মতো খুলে দাঁড়াই
নিজেকে।
জানি প্রথম প্রথম অনুভূতিরা
থমকে দাঁড়াবে,
স্মৃতি
ঘাঁটবে।
তারপর শূন্যকে অবলম্বন
করে চিনে নেবে মহাশূন্য।
জানি, এ সবই মায়া
যেভাবে নিজের ফোকাস দূরত্বে
ছায়ারা ঘন হয়
যেভাবে নীলকণ্ঠ পাখি খুঁজে
পায় ভবিষ্যত দোসর
এসো, আলিঙ্গন করি
এ মাহেন্দ্রক্ষণ কিছুটা
বৃষ্টি দিয়ে যাক।
তারপর না হয়...
জেনে রেখো-
ভালোবাসাও এক প্রকার সন্ত্রাস।
দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়া।
তুমি একে রিয়ালিটি শো বলতে
পারো
কিংবা পর্যায়ক্রমে আলো
অন্ধকার
সম্পর্ক আসলে দৈনন্দিন
স্যান্ডউইচ
একঘেয়ে হয়ে গেলে পালটে
দিতে হয় অনুষঙ্গ,
নুন মরিচ।
যেটুকু শূন্যস্থান মাঝামাঝি
ঝুলে থাকে, যেটুকু ঢেউ
ওটুকুই শেষ পর্যন্ত থেকে
যায়
সময় নিভে গেলে স্মৃতিরা
জ্বলে ওঠে
একে তুমি অন্ধবিশ্বাস বলতে
পারো...
নবম অবয়ব
এই অনিশ্চয়তাটুকুই বাঁচিয়ে রাখে আলো,
আলোর শরীরে উদ্ভাসিত জুরাসিক চোখ
কনস্ট্যানটিনোপলের পতন
হয়েছিল, ভেঙে গেছিল
সোভিয়েত রাশিয়া। শ্রীকৃষ্ণ
আশ্রয় নিয়েছিলেন দ্বারকা নগরীতে। শেষ পর্যন্ত কোনও অ্যাকিলিস বেঁচে থাকে না।
নাগার্জুন সাগর থেকে উঠে
আসে আদি বৌদ্ধিক চোখ।
এই যে মানুষ জন্ম, দুঃখের
ঘরবাড়ি
সেখানে কি কোথাও মুক্তির
আগুন নেই!
গাছের ছায়ায় ধ্রুপদ হয়ে
ওঠে জীবন।
জীবনের আদি রহস্যগুলো চিনে
নেয় সমান্তরাল গতিপথ।
মায়া কাটিয়ে আরও সম্পৃক্ত
হয়ে ওঠো তুমি।
তোমার হিরণ্যগর্ভে মহাজাগতিক
আনন্দ।
বিস্ময়ের পাশে ভোঁতা হয়
পুরোনো অস্ত্র,
শান বাঁধানো উঠোন।
অপেক্ষার কিন্নর চোখ, পৌরাণিক
চরিত্র বদলে
সঞ্জীবনী রহস্য
চিনে নেয়।
এর মাঝে কি কোনও অনুষঙ্গ
থাকতে নেই!
শ্বাস প্রশ্বাসে বেজে ওঠে
অচেনা ভারতবর্ষ
সীমানায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে
থাকে অন্ধকারের ফিউচার।
একটা ঘোড়া, ছেঁড়া চোখ নিয়ে
এগিয়ে যায়
মাঠ নদী বন্দর পেরিয়ে দলাপাকানো
অবিরাম নির্জনতা।
পায়ে পায়ে হলুদ মেপলের
স্বপ্ন
পায়ে পায়ে সম্ভাব্য দহন
মেঘ থেকে পাখি, পথ হারিয়ে
ফেলে জাহাজ বন্দর
এরপর পৃথিবী থেকে রাস্তা
মুছে যাবে
চোখ থেকে ফুটে উঠবে আলো
জলের মেলানকলি কাঁপা কাঁপা
অক্ষর বুনে দেবে
অক্ষরের কোনও জন্ম নেই,
মৃত্যু নেই
এরপর পুরোনো মেমোরি কার্ড
নিভিয়ে দেবে সমস্ত অন্ধকার
মস্তিষ্ক কোষ থেকে হারিয়ে
যাওয়া শব্দরূপ
ফিরে পাবে বিষ্ণুপুরান
টাইমজোন থেকে আয়ুজল বোধিপ্রাপ্ত
হয়ে
জন্ম নেবে মানুষ, জন্ম
নেবে ত্রিনেত্র ভগবান।
এ এক পাশাপাশি ফিরে আসা
সহাবস্থান
একই ফ্রেমে টুকরো পরস্পর
এরপর প্রত্যাশা বেড়ে যাবে
এরপর সাহসী নদীবাঁক
ঝাঁক বেঁধে মানুষ উড়ে আসবে
আশ্চর্য পৃথিবীতে
দশম অবয়ব
এ
নগর সভ্যতায় তুমি প্রান্তিক বড়োই
আগাপাশতলা আইসোলেশনে আছি
মনে হয়
ভয় থেকে গড়িয়ে নামে শুক্লপক্ষের
চাঁদ
তুমি কি জানবে না কিউবিক
অন্ধকার কতটা
অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে
কতটা তুচ্ছ ফেয়ারিটেল কন্যারা
সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই
সব এলোমেলো হয়ে যায়
পাতার শব্দে টের পাই বাতাস
এখনও জেগে
পয়গাম শিলা নয়,
আগুনের লাভস্টোরি তোমাকে
মন্ত্র দিয়েছে
প্রতি ইঞ্চিতে হেসে ওঠে
কৌশল
তাকে তো থেকে যেতে হবে
সময়ের ক্লোন থেকে জেগে
ওঠে মাছরাঙা ঘুম,
যুদ্ধের কালশিটে দাগ।
এরপর স্মৃতি মিলিয়ে নেওয়ার
পালা
যাত্রাপথের গভীরতা বুঝে
শব্দ নিক্ষেপ চলে
শব্দ, ওহে মায়াবী শব্দ
অনেক না জানা গল্প
ব্যক্তিগত সবুজ থেকে উঠে
আসে
তুমি দু-হাতে জড়িয়ে ধরো,
চুমু খাও
আষ্টেপৃষ্ঠে নিরাপদ
চুলের কাঁটায় এখনও লেগে
আছে
দগদগে অতীত।
আমি কি অভিমন্যু হতে চেয়েছিলাম?
লতাগুল্ম ঘেরা প্রাচীন
নগর
সেখানেই তো কয়েদি জোৎস্না
রাত
অন্ধকারের খনিজ। অন্ধ জোনাকি।
তার কি কোনও প্রকাশ নেই!
এসব ভাবতে ভাবতে চক্রব্যূহে
প্রবেশ করি
সে এক ম্যাজিক নগরী
একা কনিস্ক, চারিদিকে ঘিরে
আছে আইটেম গার্ল
আমি স্বাধীনতার রুটম্যাপ
খুঁজে বেড়াই
তন্ন তন্ন অন্ধকার
সার্চ লাইটেও এর বেশি দেখা
যায় না
কোনও এক অজানা কিংবদন্তি
কৈশোরের জুলভার্ন
এরপর ছায়ামণ্ডল থেকে নেমে
আসবে নটিলাস
এরপর সে ডুবোজাহাজের পেট
থেকে জেগে উঠবেন ঈশ্বর
এও কি কোনও ফ্যান্টাসি
নয়!
বেঁচে থাকার কৃৎকৌশলে কি
প্রচন্ড উপস্থিতি তোমার
আমি ভুলে যাই মন্ত্র,
ভুলে যাই কীভাবে বেয়নেটের
খোঁচায় অন্ধ করতে হবে অহল্যার যোনি
একাদশ অবয়ব
আমাকে
ক্ষমা করো ঈশ্বর
এভাবে
চক্রব্যূহ থেকে বেরোতে চাই না আমি
সক্ষমতার সিলেবাস তোমাকে
আন্তর্জাতিক করেছে
প্রযুক্তির রঙিন হাতঘড়ি
শিখিয়েছে
সময়কে রিমোট করার দুর্লভ
মন্ত্র
আমি বিশ্বাস করি
এভাবে অন্ধের ভূমিকায় স্বপ্ন
সংগ্রহ করা যায় না
তার চেয়ে সময়কে ছড়িয়ে দিতে
হবে
সময়ের আঁচলে ফুটবে মুনলাইট
সোনাটা
এ আত্মবিশ্বাস কোনও দৈব
হুজুগ নয়,
ঘন্টার পর ঘন্টা নিজেকে
সামনে দাঁড় করিয়ে
তুমিও তো আত্মরতি হতে পারো
এ অনুষঙ্গে রথ দেখা ও কলা
বেচা উঠে আসে
আমি অন্ধ হয়ে যাবার আগে
একবার অন্তত তাকে ছুঁয়ে
দেখতে চাই
জীবনকে অভিনয় করতে হলে
আগে নিজের থেকে বেরিয়ে
আসতে হয়,
এও তো এক প্রকার মোক্ষলাভ
যারা জানে, তারা জানেন
এ খেলায়
ইঁদুর ও বেড়াল পরস্পরের
নাম বদলে নেয়
প্রতিবার ইন্টারকোর্সের
পর
সমুদ্র থেকে উঠে আসে মঙ্গলঘট
কোনও লজিক নেই, কোনও ইতিহাস
নেই
ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে চোখ
খুলে দেন ঈশ্বর
মৃত্যুর আগে তোমাকেও জবাবদিহি
করতে হবে
আত্মশুদ্ধি নয়, নিজের সামনে
নিজেকে খুলে দাঁড়ানো
সমুদ্র থেকে ছুটে আসছে
হরিণ,
মাথায় সুগার-ফ্রি টিকা
তাকে অবিশ্বাসের কোনও উপায়
নেই
ইনবক্স জুড়ে তুমি আলো এনে
দিলে
এতটা উজ্জ্বল কখনও তো লাগেনি
তোমাকে
এসো, জন্মের মতো আমরা মিশে
যাই
এসো, নিঃশেষ হওয়া পর্যন্ত
দ্বাদশ অবয়ব
অন্ধকার
এক নিবিড় খেলা
যতটা
সহজ, ততটাই মোহ
ঔপনিবেশিক সাদা পাতা নক্ষত্রের
প্রতিশব্দ জন্ম দেয়।
যেন জন্মান্তর হেঁটে যাওয়া।
শুরু নেই, শেষ নেই
নিজেকে প্রমাণ করার কোনও
তাগিদ নেই
মানুষ কি এতটাই ঐশ্বরিক?
নাকি শেষ পর্যন্ত কামগন্ধে
পাতাল খুলে যায়,
দরজায় স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ!
নিশাচর নক্ষত্রের মতো তার
শরীর থেকে
ঠিকরে বেরোয় প্রাচীন আলো
হে আর্য, এ ক্ষণ কি কিংবদন্তি
হয়ে যাবে?
জ্বালানি ফুরিয়ে যাবার
আগে দৃশ্যের সামনে
নির্লিপ্ত হাসে টাইমমেশিন...
সভ্যতা সেই সুতোটাকে খুঁজে
বেড়ায়,
স্মৃতির মধ্যে পায়চারি
করে অন্তর্ঘাত।
এভাবেই কি রাষ্ট্র ভেঙে
যায়?
এভাবেই কি তার গড়ে ওঠা!
একটার পর একটা ছবি,
প্রাচীন মহেঞ্জোদারো থেকে
পাটলিপুত্র
স্যুররিয়ালিস্টিক ভঙ্গিতে
দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু গল্প, কিছু মিথ কিংবা
হলুদ রিয়ালিটি...
সমস্ত বৈভব জীবাশ্ম ঘেঁটে
অবিকল পুনরুদ্ধার করে ইতিহাস।
ইতিহাস কি আসলে ছন্দপতন
নয়!
শ্বাস প্রশ্বাসে এ যেন
দৃষ্টির মধুচন্দ্রিমা।
ছায়া সরে যায়,
মাথা থেকে ভূগর্ভস্থ স্ফুরণ
কে যেন সেতু বিছিয়ে দিয়েছে
দৃশ্যমান পৌরুষ শর্ট-সার্কিটে
উন্মাদ হয়ে যায়।
ইচ্ছেমতো বোঝাপড়া সেরে
নেয় প্রিয় রং,
খোলসের বাইরে শীতল উচ্ছ্বস।
আশ্চর্য অজন্তা ইলোরা,
কিংবা চিত্রকল্পে গতিহীন
প্লেট-টেকনোটিক।
পায়ের ছাপ দেখে বোঝা যায়
না কতটা হিংস্র ছিল আদিম কুরুক্ষত্র...
আসলে মূর্খ মানুষ ঈশ্বর
হতে চেয়েছে বারবার।
ফিরে আসা এবং না আসার মাঝে
যে স্পর্শকাতর,
অলীক শূন্য থাকে সেখানেই
আলোর জন্ম
সমস্ত অহংকার আর আত্মত্যাগের
মাঝে
যে চিরকালীন নদী বয়ে যায়
সেখানেই ঝলমল করে ওঠে জীবন
কীভাবে এর ব্যাখ্যা দেওয়া
যায়!
এ যেন সময় অক্ষ বরাবর অনন্ত
প্রতিসরণ,
বারবার ভেঙে যায়,
বারবার তাকে জুড়ে দেয় কেউ
না কেউ।
ইতিহাস জানে ভারতদর্শন,
চাণক্যের চাণক্য হয়ে ওঠা।
আমরা কেবল পাতা উলটে যাই,
ক্রমাগত কয়েকটা চেনা সমীকরণ
ধরে
পরিধি থেকে পৌঁছতে চাই
কেন্দ্রে
আসলে কিছু সূত্র পাঠোদ্ধার
করা যায় না,
নিজের মধ্যে নিজেই অসমাপ্ত
থেকে যায়
ত্রয়োদশ অবয়ব
একটা
দেয়াল, কোনও যতিচিহ্ন নেই
যা
কিছু বিক্রয়যোগ্য সীমা থেকে অসীম-
ক্রমশ ক্ষয়ে যায় পায়ের
তলা।
সম্পর্ক খাদ্য ও খাদক।
যেটুকু পরিচলন স্রোত, ডানা
মেলে দেখা
দেখায় ভাঙে অবয়ব,
দীর্ঘ মেয়াদী প্রতীক্ষা
প্রবেশাধিকার খুঁজে পায়-
কে বলবে অনির্দিষ্ট ভাঙনের
কথা।
কে লিখবে স্নায়ু যুদ্ধের
পর প্রবল জলোচ্ছাস
কীভাবে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
মহাকাল থেকে খসে পড়ে মুখোশ,
স্পষ্ট হয় কনিষ্কর হারিয়ে
যাওয়া মাথা।
কয়েকটা নিঃসঙ্গ শিলালিপি
সময়ের লকগেট খুলে দেয়।
এরপর মুখোমুখি সময়,
শব যাত্রীরা মঞ্চে এসে
দাঁড়িয়েছে।
আর একবার কলিঙ্গ যুদ্ধ
হবে, আর একবার পানিপথ
সময়ের বিরল গন্ধ থেকে মাঝপথে
উঠে আসে জলপরি।
তার ডানায় ঘুমন্ত সভ্যতা।
ভগ্নাংশগুলো জোড়া দিতে
দিতে মুছে যাওয়া গল্পেরা হেঁটে আসে।
রথের চাকায় বিদ্যুৎ ঝলক।
শোভা যাত্রায় তেত্রিশ কোটি
দেবতা।
মনেহয় এবার একটা স্পষ্ট
ধারণা তৈরি হবে।
ধর্ম যুদ্ধের শেষে কে ওড়াচ্ছে
বিজয় কেতন?
তাহলে কি এই জয় পরাজয় বড়ো
আপেক্ষিক!
দম্ভ চূর্ণ হয়, আর একটু
জুম করতেই
হেসে ওঠেন প্রজাপতি ব্রহ্মা
আমরা দেখি ধর্ম ও অধর্ম
হাত ধরেছে একে অপরের
কফিনে শেষতম পেরেকটি পুঁতে
দেন কলির ঈশ্বর।
এই কি প্রকৃত ত্রিবেণী
সঙ্গম!
টলটলে জলের মতো মায়া-
কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই,
নেই পরলোক।
লক্ষ লক্ষ মানুষ, মানুষের
মুখোশ পরে নিয়েছে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন