নীলম সামন্ত'র কবিতা
ঘুমের মধ্যে
ঘুমের মধ্যে দেখি,
তোমার ফেলে যাওয়া পদচিহ্ন
থেকে
জন্ম নিচ্ছে আদিম জোনাক।।
হেঁটে যাই বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের
পাশ দিয়ে;
যুগান্তরের দেওয়াল ছুঁয়ে।
বামদিকে তোমার এঁকে দেওয়া নদী
ডানদিকে আমার নিজস্ব
বৃষ্টিপাত৷
থেমে যাওয়া ভাস্কর্যের সামনে
খুলে ফেলছি নিজেকে;
উড়িয়ে দিচ্ছি অসময়ের জমে
যাওয়া
চারুকলার মহাকাল।
দেখি,
তোমার দীর্ঘ ছায়া,
বট গাছের ঝুরির ফাঁক দিয়ে
ছড়িয়ে আছে;
যেন অবিনশ্বর প্রেমের প্রথম
অধ্যায়।
তুমি আছো;
প্রবল ভাবেই আছো৷
জোনাকির আলোয় সাজিয়ে রাখা
গালিচার ওপর
মধ্যরাতে ফোটা
বিলুপ্তপ্রায় ফুলের মতো।
ঝঙ্কার
একদিন মরে যাবো বলেই
রোজ মাথার ওপর একবার করে চুমু খেয়ে যায় জ্বলন্ত সূর্য।
চৌকাঠের ভেতরে বসে
আসনে সেলাই করে রাখা পৃথিবীর
কাছে গল্প করি
অন্ধকারের।
বলি, 'অন্ধকার' আমাদের না
দেখা স্বপ্ন।
ধর্মগুলোকে জড়িয়ে ঘুমোবার সময়
আকন্ঠ গিলে নিই অজুহাতের তরল।
আমরা কি আদৌ মরি?
চিতার আগুনের মতো রঙিন ধানফলা
মাসের সুখ খুঁজে নিতে
নাম লেখাই খরগোশের দলে।
কী নিদারুণ ক্ষিপ্রতায় বেঁচে
আছি।
সত্যিই বেঁচে আছি?
কি হতো যদি আমাদের মৃত দেহ
গুলো হাত পা ছড়িয়ে
বসে থাকত বসার ঘরে
কিংবা মিছিল করত
রাস্তার মাঝখান দিয়ে?
ভাঙাগড়া
ঘুলঘুলি দিয়ে ঢুকে পড়া মেঘ
গড়ে তুলেছে আশ্চর্য ছায়াপথ।
শরীর থেকে খসে পড়ছে দর্জির
হাতে গড়া অভিনেতা অভিনেত্রীর দল।
একে একে মুছে যাচ্ছে
সৌরমন্ডল৷
আমার কান্না পায়না।
পেলেও তাকিয়ে থাকি আকাশের
দিকে।
দেখি ভ্রাম্যমাণ দোঁহার
পৃথিবীতে
প্রতিধ্বনিত হচ্ছে
দেহতত্ত্বের দর্শন৷
পেন্ডুলাম
শান্তিপূর্ণ মানুষ ভেবে
আমার বুকের ওপর আবেগহীন
সংঘাতগুলো
সেলাই করে গেছো,
পদ্ম পাপড়ির মতো ভাঙা বোতামের
ঘর।
কী নিশ্চিন্তেই তুমি ঘুমিয়ে
থাকো
ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখো,
দেখো রঙিন মুখোশের কোলাজ ভেঙে
উড়ে যাচ্ছে সাদাকালো
অ্যালবাম৷
সেবার আষাঢ় মাস আসতে দেরি
ছিল।
অথচ বৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছিল
স্বপ্নে ভরা পেন্ডুলাম।
কি হতো?
যদি মেঘগুলো ধুলো ঝেড়ে
চন্দ্রকান্তমণি মনির মতো
শুয়ে থাকত মধ্যমা জুড়ে।
কিংবা চোখের অক্লান্ত দোলন ভুলে
ছাতিমের গন্ধ ছড়িয়ে যেতো
মহাকাশের দিকে।
নাহ, এবার আর নয়
আবারও যদি ফিরে আসি,
গ্রহাণুপঞ্জের পথ ধরে
অনুরনন হবে 'ওঁম'।
তখনই যেনে নিও
অক্লান্ত বৃষ্টির পর চুলের
ফাঁক থেকে স্বর্ণালি গুটিপোকা উড়ে যায় হলুদ প্রজাপতি হয়ে।
ভোরবেলায় ঘুম ভাঙলে
কোনদিন ভোরবেলায় ঘুম ভেঙে
গেলে
বালিশে মাথা রেখে সূর্য ওঠা
দেখি৷
না হওয়া বহুতল ঘরের পেছন থেকে
বেরিয়ে
অনাবিল খুশিতে ছড়িয়ে পড়ে
আমাদের নামতা পড়া সংসারে।
বড় ইচ্ছে করে ভালোবাসতে।
এই সবুজ বিছানা। নীল চাদর।
তোমার শান্ত ধুকপুক।
ভালোবাসলে শরীরে জেগে থাকে
নির্ঘুম জোনাক আগুন।
প্রপাতের ঢল নামে,
সশব্দে ঝরে পড়ে বোগেনভেলিয়া৷
যেন ভোরের আনন্দ ভৈরব৷
ভোরবেলায় ঘুম ভাঙলে
ইচ্ছে করে বালিশের ভেতর
পুষে রাখি কুসুম রঙের সূর্য;
দীর্ঘ প্রেমের মরুঝড়৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন