বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের গুচ্ছকবিতা


বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের গুচ্ছকবিতা 

যে মেয়েটি ইউ টিউবে গান শুনছে  

জলহীন প্রান্তরে তুমি সেই প্রাচীন মেয়েটি 
রুখামাটি নিংড়ে আজও সব  সুর জমিয়ে রেখেছো
শুকনো নদী
একা একা জেগে থাকে জ্বরতপ্ত বালির উঠোন 

মোবাইলে ইয়ারফোন গুঁজে পেড়ে আনবে বৃষ্টির মৌতাত 
মেঘমল্লার দেবে নিঃসঙ্গ নদীকে স্নান, সঙ্গমের সুখ

এই এত সুর নিসর্গের গায়ে লেপ্টে আছে
কী লাভ কী লাভ এতে 
তুমি সেই কবে ছায়ার ভেতরে বসে বসন্তের গান লিখেছিলে 
ভিজে যাবে বলে নদী সব সুর বেধেছে দুপাড়ে  ... 


নার্সিসাস 

বুকের গোপনে ক্ষত, পোড়ানো অঙ্গার 
 দহন চিহ্নটির নীচে জ্বালা ছিল 
কাকে সে দেখাবে এই অন্তর্গত দাগ ? 

গয়নার সঞ্চয়ে কিছু মুদ্রাদোষ  প্রকৃত মায়াবী
ঢেকে রাখে প্রাণপণ ভেতরের যা কিছু বিকার 

অহম  শব্দটির  সাথে  আত্মীয়তাসহ সব অহংকার 
কে পারে ছিঁড়তে এই স্বার্থমগ্ন দাবি?  

কী দেখছো ,নার্সিসাস ?
কাকচক্ষু সরোবরে,  জলের  অতলে কে আছে লুকিয়ে ,   
জ্বালা, না কি যৌনবিলাস  ?  

আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে...

বাতাসে জীবাশ্ম রেখে
সময়ের গভীর খাদে একদিন  হারিয়েছে  যাদের পালক  
ব্রিফকেসে ধুলোমাখা অসুখের দাগ 
অসতর্ক চশমায় ঝাপসা আগামী 
গোপন  ডানার  তলে আগুন লুকিয়ে রেখে  
সুগন্ধের যন্ত্রণায় ছটফট করেছে সারা রাত  

অন্ধকার দেওয়ালের গায়ে এইসব স্থির কিছু  ছবি 
বরফের মশাল নিয়ে 
জল খুঁজতে খুঁজতে তারা এসেছিল এতদূর পথ 

আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে..  মেঘ ও বিদ্যুৎস্বপ্নে
পৃথিবীতে প্লাবনের  বৃষ্টি ঝরে পড়ে


প্রতিটি জন্মের আলো 

আলো ফুটলে ভোর হয়
আবার নতুন জন্ম এই গাছে আর একটি  ফুলের 

ফুলের ভেতর ফুঁ  দিয়ে  উড়িয়ে দিচ্ছে  কেউ স্মৃতিপথ  
পরাগের দাগ মুছে আবার নতুন গর্ভকোষ  
গুন গুন  গেয়ে উঠে  মাতৃত্বের গান

যন্ত্রণা  ভেঙে ভেঙে কোন এক শতাব্দীর দিকে
 চলে যাচ্ছে অদৃশ্য  সময় 

এক জীবন অনন্ত জীবন 

গাছে গাছে ঝুলে আছে অসীম জন্ম- লেখা  পাতা 
ওল্টাতে ওল্টাতে ঝরা ফুল    
খুঁজে বেড়াচ্ছে  প্রতিটি জন্মের  মাতৃগাছ 


যেভাবে উড়ে যাচ্ছে ডায়েরির পাতা 

গাছ কি যন্ত্রণা লেখে ?
ঝরাপাতা  জানে সেই দীর্ঘশ্বাস
কীভাবে গোপন চিঠির  মতো হলুদ হয়েছে।

ক্লোরোফিলে চাকুরিজীবন
ভাতের ঠিকানা খুঁজতে নেমেছে শিকড় 
সূর্যের আলো মেখে রান্নাঘরে খাদ্যের হিসেব

দীনলিপি কখন যে দিনলিপি হয়ে গেছে
নিজেই জানে না 

এভাবে জীবন লেখা  উড়ে যাওয়া পাতায় পাতায় ।






   


২টি মন্তব্য: