তুষারকান্তি রায়-এর কবিতা

তুষারকান্তি রায়-এর কবিতা

শরণ

রাতজাগা শ্লোক ছুঁয়ে দেখি
আমাকে অতিক্রম করে বেজে উঠছে আমার আশ্চর্য চকমকি !
আর , আমি ! একতারা হয়ে ফুটে উঠছি মেঘে ও মল্লারে 
কাগজি নৌকার মতো ভেসে যাচ্ছে  আমার
সোহাগের পদাবলি, শ্রীরাধার নাম  !
বাঁশিতে বিজুরিরেনুর রেখা , হৃদয়ের সংহিতা  ! 
 দ্যাখো , জ্যোৎস্নার মুদ্রা নিয়ে খেলতে খেলতে
কিশোরী নূপুর কেমন ছড়িয়ে পড়ছে
রাঙাভাঙা  ধানচারা মাঠে

 
খেয়া

একাদশীর জ্যোৎস্না মেখে
ভোর কিশোরী হাঁটছে একা
বয়স্ক গাছ আবছা আলোয়
বাঁক এঁকেছে স্পষ্ট রেখায়
আদরজলে নৌকো বাঁধা
যার ঠিকানা সুদূর পারে
ভাঙা গড়ার গল্পে ভেজা
স্তব্ধ পাঁজর সত্যিকারের
লালমোহনের পাগলি আজও
 জলমন্থন তুমুল নদীর
ঘরপালানো খ্যাপা বাউল
ফেরার খেয়া ভেড়ায় যদি 

 
শ্রীপঞ্চমী

গোয়ালের চাল থেকে
হাওয়ায় সাঁতার কেটে দিগন্ত ছুঁয়ে এলো
ভোরের চড়ুই
উড়ান আলোর তোড়ে
জেগে ওঠে খড় – কুটো – পাতা
ভাঁজ করা চিঠি
লাল রেশমি পলাশ
মাস্তুলে বসে থাকা চরের পাখির ঠোঁটে
ডুবে যায় একা
হিম মাখা চোখের মতন
মরা চতুর্থী চাঁদ 
 

ডম্বরু

হঠাৎ যদি ভিতর ঘরের পাগলা ভোলা
খেলার ছলে ডুগডুগিতে গাজন বাজায়
একটানা সেই শব্দে যদি আগুন জ্বলে
শহর জুড়ে পথের ধূলায় কৃষ্ণচূড়ায়
 
ভস্মমাখা ইচ্ছেভোলা  উঠে দাঁড়ায়
বেদম নাচে পায়ের তলায় স্পর্ধা রাখে
খেলতে গিয়ে ভাঙতে থাকে সম্ভাবনা
ভাঙার নেশায় আস্ত কপাল ধুলোয় ঢাকে
 
সে নাচ যদি আর কখনো নাই বা থামে
কাঁপতে থাকে পাহাড় – নদী – গ্রাম ও শহর
খসে খসে পড়তে থাকে লক্ষ তারা
আহ্লাদে  সব আটখানা যা এই  পৃথিবীর
 
মৃত আমায় ঝুলিয়ে রেখে ত্রিশূল বেঁধা
বেদম মাতে অনর্থ এই উৎসবে আজ
নকশা করা রোদ উঠলে বুঝবে কি কেউ
আমি ! নাকি ইচ্ছে আমার , কে নটরাজ ! 

 
খনন

মনে পড়ে ভাঙা সেতু
ফিকে ও ধূসর
জ্বলে ওঠে ঝমঝম নীল রেললাইন
মাটিমাখা কিশোরীর
তারাবাতি চোখ
 
বালি খুঁড়ে তুলে আনা জলের মতন
জেগে ওঠে লতাপাতা
পাখির পালক
আনন্দ শোক
পুরোনো জানালা থেকে সূর্যের খেত
নদী নূপুরের সুরে পথের হদিস
 
মধুবিচ্ছেদে আঁকা
নাছোড় নীরব
ভাঙা পিছুডাক খোঁজে

কবিতা ফেরার

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন