অভিজিৎ পালচৌধুরী'র কবিতা

অভিজিৎ পালচৌধুরী'র কবিতা


অদ্বৈত পুট
 
সাপলুডোর ছক্কার মতো
আমার ছ-ছটা মুখ
 
আকাশে চাঁদ দেখলে
হয়ে যায় পুট
ভোরবেলার জবাকুসুমে দুই
 
বেলা বাড়লে তিন
দুপুরে সেটাই চার
সাঁঝ গড়ালে পাঁচ
গভীর রাতে, বলা বাহুল্য, ছয়
তিন ছয়ও কখনো দৈবাৎ
 
এই বাঁধাধরা খেলায়
একটা অনিবার্য অজগর
নেমে যাওয়া অনন্ত পাতালে
আবার উঠেও পড়া
সময়ের মই বেয়ে দিগন্তে
 
ওঠা-পড়ার দ্রাঘিমা জুড়ে
নেমে আসে এক ঘোর অন্ধকার
না কোনো আলোর সরলরেখা
যখন আমার সব মুখ জুড়ে
শুধুই এক অদ্বৈত পুট, অচ্ছেদ্য
 
আমায় নিয়ে খেলে সব আহাম্মক !
 

নিশ্চিহ্ন ছেলেবেলার কথা..
 
এখন আধো ঘুমের অন্ধকারে জেগে উঠছে
মগজ জোড়া বিস্মরণ
ত্রস্ত রাজপথ ছেড়ে তাই গলিপথে
মুখ ঘুরিয়ে আছি
 
খুঁজছি সেই মফঃস্বলের এঁদোগলি
বাড়ির পর বাড়ি, মাঝখান দিয়ে
যাওয়ার সেই শর্টকাট সংকীর্ণ পথ
নোংরা নর্দমা ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে
সেই হাফপ্যান্ট ছেলেবেলা
 
সেই শ্যাওলাধরা পাঁচিল ঘেষা নিমগাছ
নিম ফলের গন্ধ মাখা একটা সতেজ সকাল
কাঁচা কয়লার ধোঁয়ায় আড় ভেঙে জেগে ওঠা
দুধ ছেড়ে চায়ের স্বাদ নেওয়া বাল্যকাল
 
ঐ তো ত্রিশূলাপট্টীর কাঁচা রাস্তাটা
যার ওপর ছ'ইঞ্চি ধুলোর মরুপথ
গরমের ছুটির দুপুরে ঘুমের ভান করে
মটকা মেরে পড়ে থাকা মাদুরের
ওপর আমার কৈশোর
 
ক্যাচর ক্যাচর আওয়াজ তুলে
দুই বলদ এর গাড়ি গুড়ের টিন
চিনির বস্তা নিয়ে যাচ্ছে ভোলাচাঁদের গুদামে ধুলোতে আটকে যাচ্ছে চাকা
আর গুড়ড়ড় গুড়ড়ড় ..হেই..টক্ টক্
বিচিত্র শব্দে বলদের লেজ মুচড়ে
গলদ ঘর্ম গাড়োয়ান..
 
ঐ ধুলোয় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল
শৈশব  আকৈশোর বাল্যকাল..
 

এনক্রিপ্টেড কবিতা

 
অগস্ত্য যাত্রায়
কিছু এনক্রিপ্টেড কবিতা
এখন বুড়ো বটতলায়
ঘাসজমিতে
 
আমফান নিতে পারেনি
পড়ে থাকা মূক, পথপাশে
 
মৃত্যুকে ফেলে অন্যপথে হাঁটা
মৃত্যুকে ডাকে অনিবার্য দ্রুততায়
 
মৃত্যু হাওয়ায়
শুকনো পাতারা ওড়ে
বেচাকেনার পৃথিবী জুড়ে
 
চাবি হারিয়ে যায়
 
তালা খোলে না আর
এনক্রিপ্টেড কবিতার ..


উইকএন্ড
 
উইকএন্ড ইভনিং-এ
আমি মৃত্যুর সাথে দেখা করি
কাঁধে হাত রেখে বলি
চলো তাহলে যাই
ট্রিঙ্কাস -এ বসি
দু-পাত্তর গলা ভেজাই
 
রাত গাঢ় হলে শুনি
'হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া'
কোমর দোলাই
 
ট্রা-লা-লা-লা-লা
 
মৃত্যু অমায়িক হলে
বলি - ফেরা যাক
পার্ক স্ট্রিটের মোড়
থেকে - গুড বাই
 
যে যার মতো বাড়ি যাই


অতিক্রমণ
 
খবরে প্রকাশ, গতরাতে আকাশ
লাইন অফ কন্ট্রোল পেরিয়ে
নেমে পড়ে নদীর বুকে পূর্ণিমাকে নিয়ে
নদীও উত্তাল ঢেউ নিয়ে
ধাবিত হয় অনিবার্যতার দিকে
ওদিকে তারাদের রেজিমেন্ট
ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই অনিবার্যতায়
 
তফাৎটা এই :
কোনো পক্ষের কোনো হতাহত নেই,
শুধু জোৎস্নায় মাখামাখি
 
নদী আজ যথারীতি মোহনার দিকে
আকাশ মেঘ ঝুলিয়ে তাকিয়ে থাকে
তারারা দূর থেকে মিটিমিটি হাসে

 

 একটি তান্ত্রিক কবিতা

 
না-পাওয়ার ছাপোষা তমসুক
ছিঁড়ে ফেলে উঠে আসা
এই বত্রিশ তলার
সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটে
 
ব্রেকফাস্ট টেবিলে এখন
হাত বাড়ালেই
অ্যাভোকাডো আকাশ
কেভিয়ারের গোলাপি সময়
দিনমানের উঞ্ছবৃত্তির গার্বেজ
মাড়িয়ে আমার পোর্শে ছোটে
বাইপাস ছাড়িয়ে নিউটাউনে
 
আমি এখন সব দাবি-দাওয়ার
মিছিল, আন্দোলন তুড়ি মেরে
উড়ি দ্রোন ক্যামেরার ভেতর
জরিপ করে তুলে আনি
সব চাওয়া পাওয়ার ভূগোলের
নি‌চে লুকোনো অনন্ত খিদের বীজ
মানুষকে শেখাই কিভাবে
খিদে বুনে বুনে ফসল
ওঠে বাঁচার খামারে
হাইব্রিড খিদে খেয়ে
কিভাবে বাঁচতে হয়
 
রাত নামলেই
নক্ষত্র থেকে চলকে ওঠা
শ্যাম্পেন আমার গ্লাসে
আমি তার প্রতিটি বুদ্বুদ
ফুৎকার দিয়ে
এই মাংসের দরজা
খুলে দিই - দেখি
খিদে গুলো পচে
ক্রিমি হয়ে খুবলে খাচ্ছে
আমাকেই
 
আমি সেই নরক যন্ত্রণা
পেরিয়ে পৌঁছে যাই
দুই জঙ্ঘার মাঝখানের নিভৃতিতে
যেখানে আনত প্রদীপের
কুন্ঠিত আলো
ছায়া পেতে রাখে
 
আর
বত্রিশ তলার
সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট
ফ্রেমের বাইরে চলে যায় ..
 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন