জয়ীতা ব্যানার্জী'র কবিতা
শীত কুয়াশার বাদ্য
১
প্রশান্ত শীত। শিশিরে ঘুমিয়ে
আছে পেঁপেপাতা, নিম-ছায়াটি
কাঠবিড়ালির সদ্য জাগা
ব্যস্ততায় থেকে থেকে একটি চড়ুই
মঞ্চ আলো করে ধুলো নিয়ে
জাগলারি শুরু করলেন
তাঁকেই গোপনে বলি, আমি তো
সমস্ত ফেলে ইন্দ্রজাল দেখতে এসেছি
২
এখানে দিগন্তে যেন হঠাৎ উঠবে
জেগে সবুজ পাহাড়
ধোঁয়া ধোঁয়া জলধারা দারুণ
কৌতুকে বয়ে যাবে; তার ক্ষয়কাজ
যেন ভালোবাসা, যেন
বিদ্রূপ, চিরস্থায়ী অথবা কুয়াশা-নির্ভর
এখানে পড়ন্ত রোদ আমাকে দেবে
অলৌকিক ধৈর্যের পাঠ
যেন শহর ছাড়িয়ে স্তব্ধরাত
এসেছে প্রান্তরে পৌষের পূর্ণিমা, উল্কাপাত
দেখবার লোভে। আর তার তাঁবু
ঘিরে অজস্র পুটুসফুল আলো হয়ে আছে
৩
আমাদের মধ্যাহ্নদিন, আমাদের
সংযত গোপনপ্রিয়তা
সমস্তই রেখে যাওয়া হল এই
পর্ণমোচী রোদে
বড়দিনে আর কী কী হল
তার-ই খসড়াখানি দ্রুতবেগে
নিক্ষেপ করেছি যেই দ্বিধাহীন, জলে
ধ্যানমগ্ন, স্থির
বাঁধটির চারপাশে তোমার
হাসি-তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে
৪
সেবার যখন গেছি জঙ্গলে; শীতে, সম্ভাবনায়
প্রাচীন দেউলে দেখি ময়ূরের
ছায়াখানি
সহসা বিব্রতবোধে হেঁটে গেল
বিকেলের দিকে
মানুষের প্রতি তার
অভিজ্ঞতালব্ধ ত্রাস আমাকেও
অদৃশ্য করেছিল; অথবা
স্বভাবসিদ্ধ আমারই চেতনা যেন
প্রার্থীত যাকিছু, সে তো
অপরিসীম নির্দয়তায় অস্বীকার করেছে আগেও
৫
হোমস্টের বারান্দাতে বসেছি দু'জন
পরিমিত আয়োজন; দুপুরের
দিকে প্রথামত বৃষ্টি হয়েছে
অদূরে ঝর্ণার গান, মালিক-কন্যার
রেখে যাওয়া হলুদ বাতিটি
আপাত রহস্যময়; এলাচ
বাগানে শিরশিরে প্রবাহ যেমন
খামার ধারে ঘোড়ার খুরের শব্দে
অস্থির এখন শিখাটি
প্রত্যাশিত সূর্যোদয়ের নিকট
আমাদেরও পর্যটন বাঁধা পড়ে আছে কতকাল
৬
গতবছরের চটি, টুকরো
ইঁদুর-কল, বই, খাতা, কাগজের স্তুপ
আবাসন বন্ধ আজ আট মাস হল
যুব আবাসিকদের মধ্যে কেউ কেউ
কবিতা লিখত
মাঘের মগ্ন রোদে তাদেরই কারোর
পরিত্যক্ত মাফলার বাগানে
ধুলোয় পড়ে আছে
প্রস্তাবিত আলোর দুপুরে
এলোমেলো প্রজাপতি আসে
তাকে ঘিরে দৃষ্টিহীন মাছি ওড়ে
বিষাদের মতো
আপনার কবিতার কাব্যভাবনার প্লট বড় দীর্ঘ । যা লেখা পড়েছি, তাতে এটুকু বুঝেছি আপনার মধ্যে নেয় দীর্ঘ জীবনের অহমিকা, প্রত্যয় । একটি বা দুটি কবিতায় তা লিখে শেষ হয় না । সম্ভবত আপনি নিজেকে সঞ্চয় করতে চান না, খরচ করার মতো উপাদান আপনার ভিতরে রয়েছে । লেখা তাই বেড়ে যায় । কবিতার গঠন সম্পর্কে যেহেতু ধারণা আপনার হাতে আছে, আপনি সেটাকে পংক্তিবিন্যাসে বা স্তবক নির্বাচনে প্রয়োগ করতে পারেন । কিন্তু বিচ্ছিন্ন কবিতার ক্ষেত্রেও আপনি একটি বা দুটি কবিতা লিখে শান্তি পান না দেখেছি, সেজন্য গুচ্ছকবিতা বেরতেই থাকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আপনার কলম থেকে । কখনো তাতে এসে পড়ে সিরিজের তিন-চারটি কবিতা । আবার সিরিজটি যদি আত্মপ্রকাশ করে ,তবে কমপক্ষে ৬-৭ টি কবিতার কমে থামতে চান না । 'রাইটিং ক্লাউড' ব্যাপারটা আপনার মধ্যে আছে । এখনকার কবিদের মধ্যে এটা দেখা যায় না । তারা ধারাবাহিক লেখায় ক্লান্ত হয়, উল্টোদিকে আপনি ধারাবাহিক লিখে যাওয়াতেই তৃপ্তিবোধ করেন । এই 'লেখনির মেঘ' কবিকে বড় কবির দিকে নিয়ে যায় । আপনি ঠিক পথে আছেন । আপনার পক্ষে জরুরি আরও পড়াশুনো, আরও লেখা, এবং লিখতে লিখতে হাতের কাছে বই নিয়ে তা পড়ে নেওয়া । এটা আপনার আইডেনটিটিকে গভীরে নিয়ে যাবে । আপনাকে মানুষ পরে পড়ার জন্য খুঁজবে । খুব ভাল লাগছে আপনি নিজের লেখাকে নির্মাণের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন ভেবে । লেখাগুলো অসামান্য ।
উত্তরমুছুনশুভেচ্ছান্তে,
।। শুভদীপ নায়ক ।।
ধন্যবাদ শুভদীপ। সিরিজটি আপনাকে এতখানি মন্তব্যের যে পরিসর দিল, এই অত্যন্ত আনন্দের। সত্যি বলতে কী, একটু কবিতা লিখে কোনও ভাবনাকে সমাপ্ত করে ফেলে তৃপ্তি হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দৃশ্যগুলি আরও অনেকখানি লিখে ফেলার দাবি করে। সেই বোধ থেকেই সিরিজ কবিতার দ্বারস্থ হওয়া। ভালো থাকবেন।
মুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
মুছুন