স্নিগ্ধদীপ চক্রবর্তী-এর কবিতা
সূর্যাস্তে চুম্বন
পিপাসা আলোর তাই অন্ধকারে যাই,
পিপাসা বীজের মতো—
উড়ে যাবে, ফেটে পড়বে রাগে।
এ-জীবন প্যান্ডোরা-বাক্সের
কাছে অপেক্ষায় থাকি,
স্থির বুঝি জল উঠে এসেছে
কিনারে,
ডুবে যায় ঘাঁটি, মাটি— জল বাড়ে,
জলের মধ্যস্থলে দু’জন দাঁড়াই;
টিলার ওপাশ থেকে ডেকে ওঠে
আচম্বিত-পাখি—
কোথাও কি ঘর ছিলো নাকি!
ধর্মত মনস্তাপ জাগে।
প্রহর ফুরোয়,
তবু প্রস্বর ধরে রেখে, থাকার অধিক থেকে,
আত্মঘন জ্বলেছি তখন...
গ্রহরা পালক লেখে:
কথা নয়—
সূর্যাস্তে
চুম্বন
নদী ও মানুষবিষয়ে লেখা
একটা নদী পাথর ভেঙে আসতে-আসতে
কাতর হয়ে পাশ ফিরেছে:
একটা বাউল নাড়ি-বাড়ি সব
ছেড়েছে
কিংবা শিশু দুর্নিবার ঘাস
ছিঁড়েছে,
এখন আর শরীরে তার ঢেউ থাকে
না।
জলের ঘেরে বাস ছিলো যে গ্রাম
ক’খানির—
তারা এখন চোদ্দ আনির
হিসেব করে,
কিন্তু নদীর পাঁজর জুড়ে ভাঙার
ক্ষত, পোড়ার ক্ষত,
ডাঙার এবং জোড়ার ক্ষত;
পাহাড় চিরে নামতে থাকার কষ্ট
কত,
উপল ঘিরে জন্ম লেখার কষ্ট কত,
একটা নদী জীবন দিয়ে রোজই মরে!
এখন তার শরীরে আর ঢেউ থাকে না
একটা কারও জীবনভর কেউ থাকে
না...
অলৌকিক ইস্টিশান
মাসান্তে একবার অন্তত মনে করে
মনখারাপ হয়।
বর্ণচোরা মেয়েলি আদল ধরে
সে আমার পাশে এসে বসে;
মৃদু হাসে, নখে নখ ঘষে;
ঘাড় আড়কাত করে বলে— কী ভয়?
সামনে অনন্ত, পিছনে
জীবন ও মায়া,
দক্ষিণে ধানখেত,
বামে প্রেত-
অমার্জিত ছায়া
চান্দ্রমাসে উলুখড় বোনে!
অলৌকিক ইস্টিশান-বাঁশি যেন
বাক্সিদ্ধ ছুমন্তর:
মধ্যস্থ হৃদয় শুধু প্লুতস্বর
শোনে—
সামনে অনন্ত...
রবীন্দ্রনাথ
জানলা থেকে হাত বাড়ালে— রবীন্দ্রনাথ,
ছাতার মতো শাসন করছ মোড়ের
মাথা
আমরা যারা নামতে নামতে ঢের
নেমেছি
মই খেলেছি, সাপের পিঠে ফের নেমেছি
লুডোর দেশে—একা এবং অনুক্রমিক
আগুন-ধরা মূল্য আর ভাঙন-ধরা
মূল্যবোধে
স্ববিরোধে, সংবিরোধে
আমরা যারা পুড়ে যাচ্ছি, যাবার আগে শেষ থেমেছি
জলের ধারে, আমরা যারা কুরে খাচ্ছি আত্মরমণ
তাদের জন্য একদুয়ারী তোমার
হৃদয়—বিশ্বহৃদয়, ফলন্ত হাত
হারতে হারতে সব হারালে— রবীন্দ্রনাথ,
এখন বুঝি, তুমি একাই পূর্ণ কবি-পূর্ণ মানুষ-পূর্ণতম
আমরা সবাই খণ্ড কবি, পণ্ডশ্রমিক
বিদ্যালয় তো ক’টা দেয়াল নয় কখনও,
বিদ্যা তো আর যথেষ্ট নয় বইয়ের
পাতায়...
জানলা থেকে হাত বাড়ালেন
রবীন্দ্রনাথ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন