মারুফ আহমেদ নয়ন-এর কবিতা
বিমুগ্ধ চোখ জোড়া
তোমার দিকে তাকিয়ে আছি, পুড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত ধ্যানী গোলাপের অহংকার। জননীর
গর্ভমূল থেকে ছিড়ে পড়া জবার কুঁড়ি ছড়িয়ে দিচ্ছে শোক ও অনিদ্রার আয়ু। মানুষ হয়েও আমি
কেন সরীসৃপের মতো করে বুকে ভর করে হাঁটি। জল ও কাদায় মাখামাখি হয়ে শীত রাত্রির কাছে
প্রার্থনা করি আগুনের উত্তাপ। তুমি কখনো প্রার্থনা করো না আমার সাক্ষাৎ, এ অনন্ত রোদের
বাগানে আমি পিপাসার বদলে পান করেছি বিষের শরীর, এখন আমার ক্ষুধা-পিপাসা পায় না। শুধু
যেদিকে তাকাই পুড়ে যেতে থাকে, ধসে যেতে থাকে সমস্ত পাহাড়-পর্বত। তুমি কি সাক্ষ্য দেবে
না ভাটিয়ারীর ষোল কিলোমিটার দীর্ঘ পথ, তোমার কাছেই তো ভুলক্রমে ফেলে এসেছি, আমার বিমুগ্ধ
চোখ জোড়া।
মাংসাশী মানুষের কবিতা
হাওয়ারা কৌশলে পেতেছে ফাঁদ, কি সু-চতুর মাংসাশী মানুষেরা। শিকার করে নিয়ে যায় যত
বন্য হরিণ। যেহেতু প্রাণহীন দীর্ঘ বনভূমি জুড়ে ছড়িয়ে থাকে করাত কলের নিঃসঙ্গ হাহাকার।
পড়ে থাকে পশু-পাখির হাড়, যেনো অস্ত্র ও বল্লমের কারখানা। কাঠ-কয়লায় পাথরের দেয়ালে তোমার
ছবি এঁকেছি।আমি চিরকাল আদিম মানুষ।বনের ভেতর হারিয়ে ফেলেছি নিজস্ব শব্দাবলী। অতত্রব
আমাকে তুমি খুঁজে নিও হাড় জড়ানো শীতের রাতে, বৃহৎ বনভূমির পাশে বিষন্ন শালবন এক।
ধুতুরা ফুল
তোমাকে কেন এতো ভালবেসেছি ধুতুরা ফুল। সমস্ত যন্ত্রণার কাঁটাবীজ বুকে বপন করে একমাত্র
আমি বৃক্ষ হলাম।তুমি কিছু হলে না। আসন্ন গ্রীষ্মদিনে সমস্ত ছায়া ও ভ্রম চারপাশে ছড়িয়ে
দিয়ে আমার কেনো হলো চিরকাল অসুখ ও অনিদ্রার ব্যাধি। এখন চোখ মেললেই বহুবর্ণের অন্ধকারে
তলিয়ে যাই। সুখ শ্বাসকষ্ট হয়ে দেখা দেয়। তোমাকে পাই না দেখতে, চিৎকার করে কাঁদি,আমার
কান্না বাষ্প হয়ে উড়ে যায়।
তুমি
তোমার কাছে আমার অনেক ঋণ। অনেক শীত কুয়াশার রাত্রি উপেক্ষা করে তোমার কাছে এসেছি।
উত্তরের মৃদু হাওয়ায় তেল শূণ্য মাটির প্রদীপে যেভাবে বেজে ওঠে মৃত্যুর সাইরেন। সেভাবে
তোমার কাছে যেতে পারিনি। নিজের পাতানো ফাঁদে মাথা কেটে ফেলি।মাথা শূণ্য দেহকে বলি এখন
মধ্যরাত, তার দিকে এভাবে হেঁটে যেও না, তোমার ভয়ংকর চেহারা দেখে সে ভয় পেতে পারে।তার
করুণা জাগতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন