ময়ূরী নন্দী'র কবিতা
নির্বাসন
এগিয়ে চলেছি খোলা পায়ে
ক্লান্ত বুকের স্থবিরতা
নিয়ে, যেতে হবে আরও দূরে...
তলিয়ে দেখছি,
হাতড়ে দেখছি
আরও গভীরে...
হিসেব রাখিনি.
উদ্ধত লালসার অন্ধ কলিজায়
বধিরতা...
হতে পারিনি শতাব্দীর সেই
প্রাচীন বটগাছ,
পারিনি গড়তে একটা ছোট্ট ভ্রূণ ভবন...
নির্লজ্জতার আবরণ দিয়ে
সাজিয়েছি মস্ত একটা তরল শিরদাঁড়া,
দীর্ঘ মেয়াদি পোষা গন্ডারের
পাথুরে আকাশ...
নিভন্ত পিলসুজ বেয়ে চুইয়ে
পড়ে শুকনো মিষ্টি ঘাম...
স্বপ্ন দেখেছিলাম
ঘর্মাক্ত গায়ে,
মাকে জড়িয়েছিলাম
ভীত মেশ শাবকের মতো,
কান পেতে শুনেছিলাম পুকুরের পাঁকেদের নোনা গল্প...
ডেকেছিলে কাছে,
শিশির মাখা পায়ে হেঁটেছিলাম
পথ থেকে পথে...
নির্বাসন সাজিয়েছি ধ্যান
দিয়ে...
এখানে কোনো মেঘ নেই,
জল নেই,
মাটি নেই,
আছে শুধু কাঁকুরে কাদা
ঘর
আছে দামি পচা মরু প্রান্তর.
নগ্ন বুকে খুঁজে চলেছি
প্রাচীন বটের উদারতা,
শিশির ছুঁয়ে হেঁটে চলেছি
আরও আরও
দূরে...
মেঘ এখানে এসে অন্যমনস্ক হয়ে যায়
মেঘ এখানে এসে অন্যমনস্ক
হয়ে যায়
আলতা পায়ে খয়েরি পথে নেমে
আসে নরম নদীর গন্ধ
ভিজে ওঠে নীলরঙা একরাশ
আদর
একটু একটু করে নক্ষত্র
ছিঁড়ে খসে পড়ে মেঘের পালক
নিষ্পলক চেয়ে থাকে
আনমনা মেঘ...
মিশে যায় মাটির গভীরে
আরও নিচে নিষ্প্রভ কুঁড়ের
আস্তানায়
যেখানে
মেঘলা বসত গড়ে তোলে টাটকা
কর্পূর ধুনো
দলা পাকিয়ে পারিজাত রোপন
করে সাদা হাসির ঢেউ
মেঘ আজ বেড়ে উঠেছে বেজায়
রকম
প্রেমিক মেঘ,
নাকি ও বুদবুদ?
আসলেই মেঘ
মেঘ তুমি কাকে ভাবো?
গোপনে বিনুনি বুনন করে
চলে ক্ষয়িষ্ণু মেঘশ্রী
সবুজ চুমো ঝরে পড়ে কাঠবাদামের
সমস্ত শরীর জুড়ে
আদি অশত্থ বেদনা রস এনে
দেয় দু হাত ভরে
আমি পান করি...
নষ্ট হীরের আঁতুড়ে প্রেম
বুনি কোনো এক বাদামী ভাষায়
তেলজল মাখা প্রেম মেখে
নিই গোটা শরীরে
অচেতনা সাগর পাঁকে স্নান
করাই বাঁ…
বুনন
আমি শুধু আঙ্গুল ছুঁয়ে
পেয়েছি নদীর ওপার !
হাতে হাত চোখে ঠোঁট বৃষ্টি
ভেজা সবুজ ঘাসের মসৃন চাওয়া.
একদন্ড বিশ্রাম নিই ঝরাপালকের
হলদে হাসির বুকে,
ইঁটের পর ইঁট সাজাই
বুনোহাঁসের নরম শরীরী গন্ধে,
আমার বৈতরণীর ঘাটে
নীল সবুজ তাবু ফেলি চুপচাপ...
বকখালির সরল ক্রূরতার
ছলনাহীন ছলনায় ভেসেছি
অলস দুপুরে
চোখে রুমালে মৎস কন্যা
সাজিয়ে খেলেছি পাতাঝরা দ্বীপের সাক্ষীতে
শুধু আঙ্গুল ছুঁয়ে ভেনিসের
রাজকন্যা হতে পেরেছি বছরের পর বছর ঘুরে
ঝরা অর্কিড বিছানো চিলেকোঠা
মুখ ফিরিয়ে শুয়ে থাকে আমার কোলের উপর,
লালরঙা উঠোন খিল খিলিয়ে
পালিয়ে যায় রাত দুপুরে
সেখানে মেয়েরা তুলে নেয়
একে একে পান্ডুর মাটির প্রদীপ
জবার গন্ধ লাগায় ধুলো মাখিয়ে...
ইশারায় ডাকে আমায়,
আমি চলি
সান্ধ্য মায়ায় বুকে জড়াই
কাঁটাতার
রক্তাক্ত করি অজান্তে শুকনো
তুলোর দলা
প্রদীপ হাতে সেলাই করি
আলাদিনের বংশধর
রাতের পর রাত..।
গভীর জ্বর
অপরিণত মনের দুয়ারে
শুষ্ক বালুরাশি সেদিন
সহস্র অনুভূতির দানা বেঁধেছিলো
ভিজে যাওয়া চাতালের কোণায়
চুপটি করে বসে থাকা
অর্কিডের আলিঙ্গনে
জোয়ার এসেছিলো
ধূসর পাণ্ডুলিপির গায়ে
এক পশলা বৃষ্টি মেখে
চাতক চাতকীর অব্যক্ত
ভালোবাসা-বাসি
নগ্ন হয়েছে পড়েছিল
কোনো এক আদিমতায়
চাওয়া-পাওয়ার উন্মাদনায়
যখন
পুড়ছে গোটা পৃথিবী,
ভোগ লালসায় জর্জরিত
ক্ষুদ্র আমি,
ঠিক সেই মুহুর্তে
ভয়ঙ্কর শক্তিহীনতায় দেহের
সমস্তটুকু ছিনিয়ে গেল...
আপনা মাসে হরিণা বৈরী...
কাঙ্ক্ষিত জীবনের
মায়াহীন শূন্যতায় ভাসিয়ে
দিলো
পুরুষ তার প্রেমিক সত্তা
ধাবিত হরিণী
আপন নিলয় খোঁজে ...
তবুও
আলসে বিকেলের ছোঁয়াচ মাখা চাতকের বীজ
নধর আকাশে চোখ তোলে.
ছিঁড়ে দেয় শীতল ঘুণের প্রলেপ
অন্ধের কামনা
একরাশ পাথরের কোমলতা বুকে
চেপে উদ্ভিজ স্থিরতা
সান্ধ্য গন্ধের উষ্ণতায়
হিমবাহের বুক থেকে ঝরে পরে নির্লজ্জ অভিমান...
জোনাকির শারীরি মেজাজে
ফিরে দেখা ঝলসানো দেবদারু বন,
যার পাতায় পাতায় বিষাক্ত
আঁচড়েরা কথা বলে...
মাদারের কাটখোট্টা আলাপের
অতিথি কোকিলের রাঙানো সুর তবুও তো...
তবুও সোনাঝুরির উষ্ণতায়
নেমে আসে হেমন্তের নির্বোধ শিশির
মারীচের স্নেহের স্পর্শ
বুকে জড়িয়ে নির্বিঘ্নে খুন,
ক্ষুধার্ত শিকারির উল্লাসিত
ক্ষারীয় স্বাদ...
তবুও নক্ষত্রেরা নেমে আসে
শিরায় শিরায়,
কাশবনে,
ধান সাগরে ...
অন্ধহীন বাসি প্রেম
টাটকা রক্তের ডেলায়,
চতুর চাতকের অলস মস্তিস্ক
ঘিরে,
সর্বনাশী খেলার উত্তেজনায়
কখনও...
শরীর জুড়ে নেমে আসে
মেঘ,
বয়ে নিতে চায় প্রজন্মের
অসুস্থ ঠিকানা
তবুও...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন