সন্দীপন দাস-এর কবিতা
মোহ
কয়েকটা মানুষ জটলা করছে এ রাতে আগুনের সাথে
আগুনের খুব অভিমান...
অভিমান অদূরে পড়ে থাকা রক্তাক্ত সন্ধেমণি
ফুল, ছেঁড়া
বর্ণপরিচয়ের পাতা, ভিনদেশী অন্ধকারেরও...
ঈশ্বর মাটির হয় বুঝি?
পরিযায়ী চোখও কখনও কখনও ভাষা...
কয়েকটা মানুষ জটলা করছে শুন্যতার সাথে
চোখে অশান্ত স্বপ্ন বুনে...
স্বপ্নের খুব অভিমান, অভিমান কাছে পড়ে থাকা
মাটির ঈশ্বরের, পরিযায়ী চোখের জলেরও...
আলো কখনও কখনও বিজয় অভিলাষী হয় বুঝি?...
কথন
ঐ দূরের অরণ্য আহত ঘোড়াকে লেখেনি, লেখেনি তোমাকে
পাতায় পাতায় শুধু লুকিয়ে রেখে গ্যাছে
দ্ধিগজয়ী আদিম খিদে, লুকানো ক্ষত...
শিরায় শিরায় জমা হওয়া পবিত্র শান্তিতে
নিঃশ্চুপে পা ফেলে আমরা জেনেছি ঝুঁকে পড়া সাঁকোর মনখারাপ, বুঝেছি বিপন্ন সব রহস্যদের
পাগলামি,এ পথের একা ব্যথাও...
পাতার চঞ্চলটুকু ছুঁতে চেয়েছে আকাশ,বাকি
বন্ধুরা আলো...
শিকড়ে বাঁধা মাটির শরীরে মিশে যেতে যেতে
আমরা দেখেছি
সীমান্তের অসুখ,জলের
নীরবতা,জলপিপি...
তার একটু দূরে ফুরিয়ে আসা বিকেল,তার
বুক জুড়ে বিঁধে থাকা বুনোফুল,ক্ষয়াটে স্বপ্নিল ঘোর...
এ সকাল বুঝি ঈশ্বর-চেতন... অসীম শুন্যতার
আত্মসমর্পণ...
ঐ দূরের অরণ্য পাখাপোড়া জোনাকির কান্নাকে
লেখেনি,
লেখেনি ধুলোর মৃত্যু...
সুড়ঙ্গ কেটে গোপনে শুধু রেখে গ্যাছে জংধরা
অনেক ছুরি, জমানো অনেক আকাশ, পরাজিত বাতাসের ঘুম, তোমার
পলেস্তরাহীন অভিমান...
কাঁটাতারের ওপারে
তোমার হাত গলে যে জলটুকু ছলকে পড়ে তা চেনা ব্যথা
দমকা হাওয়ায় উড়ে যায় মেঘ, ধুলোমাখা বর্ণপরিচয়ের
ছেঁড়া পাতা...কেবল শুন্যতা জেগে থাকে...এ পথ থেকে ও পথ
ও পথ থেকে এ পথ...
অন্ধকারের অবস্থাও তাই...এ ভোরের আলো ফোটার
আগেই
পিঠে চাঁদ বেঁধে সাঁকো বেয়ে পাড়ি দ্যায়
সীমান্তে...
আগুন পাখিদের দেশে... ঝরাপাতার দেশে...
তোমার খোঁপা থেকে অসাবধানতায় যে অক্ষরগুলো ছিটকে পড়ে ধ্রুপদ
ঘরানার দেশে তাদের গায়ে লুকিয়ে থাকে
গোপন রক্তের দাগ
তারা এ কবিতাকে একা ফেলে মিলিয়ে যায়...
মিলিয়ে যায় কাঁটাতারের ওপারে...
কোরক
কয়েকটা ধুলোমাখা গান বাঁধা আছে তোমার আঁচলে
বাঁধা আছে সূর্যাস্ত, সূর্যোদয় আর তার মাঝের
অন্ধকারটুকু
প্রাচীনতার নাগপাশে আবদ্ধ এ প্রজন্মের ঈশ্বর
ছুঁয়ে দিয়ে যান
গুল্মলতা, হাতছানি দিয়ে ডাকা অচেনা পথ আর বৃষ্টিভেজা
ক্ষতদের...
দুচোখ বুজে গুপ্তসম্রাটও দিব্যি পার হয়ে যান
গলির পর গলি,
শহরের পর শহর,আলোর
পর আলো...
তবু পাখিরা গান গাইতে গাইতে ঘরে ফেরে, ঘরে ফেরে ছায়ার আড়ালে
থাকা মুখগুলোও...
শতাব্দী আবারও নতুন করে দাবার ঘুঁটি সাজায়, অলক্ষ্যে নির্মাণ করে তার
নতুন রণকৌশল
কিন্তু আমার আর ঘরে ফেরা হয় না... সমস্ত
সম্ভাবনাময় মায়াজালের ওপর দাঁড়িয়ে এ দাসবংশকে জাগিয়ে তুলি
দিল্লির মসনদে নিয়ে যাবো বলে...
মাঝপথে ফেলে আসি পুরোনো ক্ষত, হাতছানি দিয়ে ডাকা সেইসব
পথ, পাখিদের গান, ছায়ামুখগুলো আর মাঝরাতের
লেখা এ কবিতা...
তোমার আঁচলে বাঁধা আছে বুনোফুল, চাঁদ, লুকিয়ে মোছা কান্না আর
কান্নার ঈশ্বরটুকু...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন