সন্তু করের কবিতা
জীবন ও যাত্রা
ঘোষনা
পেট শোনে না,সংসার শোনে না কথা
বয়সের ভারে নুব্জ্য বাবা
শিরদাঁড়া করছেন সোজা।
জীবন জুড়ে সান্ধ্য ধিৎকার
কোনদিকে আলো,কোনদিকেই বা অন্ধকার ?
স্বজন হারিয়ে পার্থও গ্যাছে মহাপ্রস্থান।
পলাতক তাই বারবার পথ খুঁজে
সংসার তোমাকে তাই বিদায়,বিদায়।
১ম দৃশ্য
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বপ্ন গেঁথেই দিন পার
তথাপি শান্তি দেয়নি বনলতা
ইঁট,পাথরের জঞ্জাল সরিয়ে তাই
শূন্য মাটির উপর ছুটছি,
কাঁটা ঝোপ ডিঙিয়ে ছুটছি
ছড়িয়ে পড়ছে রক্তবিন্দু ।
আকাশ ভাঙছে,ফনা তুলেছে বিষধর
আজ বুঝি অট্টহাস্যে ভেঙে পড়বে একাকী বৃক্ষ
হে মনুষ্য লালায়িত ভূমি
শোনো আমাকে কোলে তোলেনি
আমারই ভিটের মাটি
আজ রাতটুকু তাই তোমার অতিথি।
২য় দৃশ্য
পালা করে ধূলো মাখি
নিজের দিকে তাকালে ভয়
পাছে কৃষ্ণপ্রেম বাসা বাঁধে শরীর ভিতর।
জীবনজুড়ে জেগে ওঠে কংক্রীটের দেওয়াল
মৃদু মন্থরে পাশ দিয়ে বয়ে যায় পথ
ঐ পথেই হেঁটে যায় মায়াবী শ্বেতপরীর দল
মুগ্ধতায় চেয়ে থাকি,
ধেয়ে আসে ঘৃণা,গালাগাল
এ জীবন তবে শুধুই জীবন নয়
নির্বাসন। অজ্ঞাতবাস,বিরাট নগর ।
৩য় দৃশ্য
দুর্বাসার অভিশাপেই রক্ষীর মুক্তি
বহুকালের বন্দীত্ব ভেঙেছে
আজ তবে দেওয়াল ভাঙার উল্লাস ।
উল্লাসিত হতে হতে মধ্যরাতে টেনে ধরে পিছুটান
এ টান অস্তিত্বের,ইতিহাসের
চলো তবে পাল খোলা যাক
স্রোতের বিমুখে যে পথ
ঐ পথেই হেঁটেছিল দস্যু রত্নাকর
আমিও হাঁটব, যেতেতো হবে বহুদূর
নদী পেরিয়ে ফুলবেড়িয়া,তারপর নবজীবনপুর ।
৪র্থ দৃশ্য
জীবনপুরের জীবন অতি মোহময় ।
এখানে মায়াবী কৃষ্ণের টানে
ফসল মাথা তুলে
যন্ত্রনার স্বান্তনায় জরাজীর্ন চাষীর
ছাতি বাড়ে ইঞ্চিখানেক ;
সন্যাসীর নীমগাছে
ডেকে যায় অচেনা পাখী,
গৃহস্থ বউ মুচকি হাসে
গ্রাম জুড়ে বৃন্দাবন নেমে আসে ।
৫ম দৃশ্য
শোনা গ্যাছে
গৃহকর্তী বাড়ীর এ ঘরেই লাগিয়েছিল ফাঁস ।
সেই থেকেই রটে গ্যাছে
এ বাড়ীতে শুধু ভূতের বসবাস ।
রাত্রি গভীর হলে পদধ্বনি ভাষে,
শব্দ হয় এঘর ওঘর
পুকুর ঘাটে অশরীরি ঝনঝন
ধেয়ে আসে বাতাস
ভেঙে যায় জানালার ভাঙা কাঁচ
এভাবেই যাত্রাদৃশ্যে জমে ওঠে মধ্যরাত্রির সংসার।
৬ষ্ঠ দৃশ্য
দেশ জুড়ে ঝড় উঠেছে
আয়লা ভেঙেছে ঘর
ভিটেতে উঠেছে লালবাঁধের জল ।
চাল নেই, পানীয় নেই
কিই বা করতে পারে হরতনের গোলাম
আজ তবে থাক উপবাস রন্ধন
নিরবে লেখা হয়ে যাক
যতো দুশ্চিন্তার কথাতিহাস ।
তাস-উল্লাসে তবুও আশা জাগে
দুঃসাহসী আসবে, ডিঙাবে অলঙ্ঘ জল
জরাসিন্ধের শরীর চিরবে
গড়িয়ে যাবে যতো রক্তজল ।
৭ম দৃশ্য
লীলা খেলা সাঙ্গ হলে
রক্তজল নেমে আসে ডাঙার উপর
ঋতুমতীর গন্ধ ভাসে
দাঁড়া বেয়ে ছুটে যায় জল
কাকটিয়ার ডাঙা পেরিয়ে কেয়াডহরি,কৃষ্ণনগর ।
মায়াবী স্রোত ডিঙিয়ে আমিও হাঁটি
বিদায় তবে চিত্রাঙ্গদা,বিদায় উলুপি।
কৃষ্ণের নির্দেশ,যেতে হবে বহুদেশ
আবেগ তাই খুন করেছি,অনুভূতি পুড়ে খাক
আমি আজ পথিক সংসার দূরে থাক ।
৮ম দৃশ্য
রাত্রির দ্বিপ্রহরে দার্শনিক হয়ে যাই ।
চরিত্রের খোলস খুলে যুধিষ্ঠির কেউ,
কেউ বা রাগ উজাড় করে, ঘুসি মারে ,
পুনরায় জড়িয়ে ধরে।
এভাবেই বন্ধু বাড়ে, ভালোবাসা অন্তরে অন্তরে ।
রাত্রি বাড়ে
সত্যের ভারে চোখ ভিজে,বুক ভিজে
উলঙ্গ শরীরে রাত্রি ভোর বৃষ্টি পড়ে ;
পাখি ডাকে,আলো ফোটে
কৃষ্ণনগর জুড়ে কোলাহলের বাঁশি বেজে ওঠে।
৯ম দৃশ্য
যাত্রা দৃশ্য এখন কাঁকর মাটির রুক্ষদেশে
এখানে শুস্কতায় জীবন,রুক্ষতায় রতন
জল নেই,
দোকানী টাঙিয়েছে লজ্জার কারন
চুপিচুপি তাই প্রাতঃকৃত্য সারি,স্নান সারি
বরাদ্দ চার ঘটি জল ।
এখানে বুকে লোহার পাটা বেঁধেও
কুয়োর জল দেখা দুর্দায়,
শুনেছি পাঁচ টাকার বেতনে জল দেয় যে বুড়ি
দশ টাকা দিলে চক্ষু হবে বার ।
অগস্ত্য বুঝি গোন্ডুষ পান করে
ভুল পথে ফেলেছিলো জল
সেই থেকেই এ দেশের লোক
তৈলাক্ত বসে আছে
জল নেই,শুধু ঘর্মাক্ত কলেবর।
চলো আজ আর কাজ নেই
বহুদূরে চলে গ্যাছে যে খাল
সেখানেই হেঁটে যাবো
সন্ধ্যে নামার আগে সেরে নেব স্নান
হিংসায় জ্বলবে রুক্ষ গাছ
অবশেষে করে নেবে
কালবৈশাখীর আহ্বান ।
১০ম দৃশ্য
রাত জাগা মানুষেরা সকলেই বন্ধু
পাশের বাড়ীর পাঠরতা ছেলে,নৈশপ্রহরী
অথবা শেষ বাসে ফেরা নাম না জানা মধ্যবয়সী
সকলেই জানে সকলকে
রাত্রি গভীর হলে কথা হয়, মধ্যরাত্রির কুশল বিনিময়।
শনি অমাবস্যার রাত আসে
কোলাহলে বড়ঠাকুর জেগে ওঠে
প্রহরের গন্ধে ধূপের গন্ধ মেশে
রোজনামাচার ছেদ পড়ে
কর্মক্লান্ত রাত্রি শেষে
আলো বড়ো বিষাদ হয়ে জেগে ওঠে ।
রাতজাগা মানুষই কেবল জানে
রাত্রি গভীর হলে
অন্য জগৎ ,অন্য দিন
অন্য মানুষ জেগে ওঠে
১১তম দৃশ্য
বাড়ীতে জামাই এসেছে ধূলোপায়েশ্বসুর ঘর,
নববধূর বেড়েছে গরব
আজ তাই উৎসব,রাত্রিরে অতিথি ভোজন ।
মাঘের শীত,
কুয়াসায় হারাবে নদী,নিশি ভুলাবে পথ
কোথায় সাঁকো,কোথায় বা জল ।
প্রহরের শব্দ পাল্টে গ্যাছে
চলো তবে ফেরা যাক
যেতে তো হবে বহুদূর
ঐ দূরে কঙ্কাবতী,মধুবন
নদী পেরিয়ে মঙ্গলপুর
তারও বহুপরে শান্তিনগর আমাদের উচালন।
১২ তম দৃশ্য
যাত্রা দৃশ্যে নদী মিলেছে নদীটির দিকে,
সংসার হয়েছে পূরন ।
মিলন জ্বালা অসহ্য বলে
নদী বেছেছে একাকীত্বের পথ ।
লোকমুখে অতীত রটে ;
নদীর ভেঙেছে সংসার,ভেঙেছে আবারো পথ
মধ্যিখানে জন্মেছে দ্যাখো সন্তান ভূমিচর ।
বৃদ্ধজনে আদরের নাম দিয়েছে কুনি
গৃহস্থ,পলাতক পশুর দল খেলে
অলস দুপুরে পাখিরা গায় ঘুমপাড়ানি ।
বৎসরান্তে বাবা আসে,মা আসে
পলি ঢেলে ভালোবাসে
এভাবেই সন্তান আরো,আরো বড়ো হয়ে ওঠে।
১৩ তম দৃশ্য
দৃশ্যপটে দায়িত্বের ছবি ভাসে ।
যেদিন নদীর বাড়িয়েছিলো কলেবর
সেইথেকে কর্তব্যের ভা্রে অবিচল
পাহারাদার এই পাথর।
বর্ষাদিনে ভাঙন, গ্রীষ্মদিনে শ্বাপদ
রক্ষাকর্তা কি ভগবান না হয়ে যেতে পারে !
সমারোহে পূজা তায় মাঝে মাঝে ।
ভালোবেসে আদরের নামে কেউবা ডাকে লোকে,
সেই নাম ছড়িয়ে পড়ে বহুদূর দেশে।
বর্ষাদিনে দিকে দিকে স্বস্তির খবর ভাসে
ভয় নেই ধনা-মনা এখনও তো জেগে আছে ।
১৪ তম দৃশ্য
সকালের জীবন অতিব নিয়ম মাফিক,
অচেনা মানুষ তাই চেনা হয়ে আসে।
শরীর নিয়ে অতিব চিন্তিত মানুষের ভীড় থেকে
রুটিন মাফিক কেউ তাই মিলিয়ে নেয় সময়।
প্রশ্ন আসে-
আজ অ্যাতো দেরি ক্যানো ?
নির্বাক কথা হয় কারো সাথে,
ছুটন্ত যুবক মুচকি হাসে,
ঘাড় হেলিয়ে জানান দেয়
ভালো আছে ।
প্রত্যুত্যরে আমিও হাসি
অ্যাতোদিন হয়ে গ্যালো নাম তার জানা হয়নি।
১৫ তম দৃশ্য
কথার কথা নয়,
এ গ্রামের সবাই সবার আত্মীয়
উৎসব তাই মাঝে মাঝে
ভালোবেসে ভাগ, যার যা জোটে ।
এখানে সংসার ভাঙে
সম্পর্ক ভাঙে না কোনদিন
Asadharon hoeache sahitya da
উত্তরমুছুনঅসাধারণ
উত্তরমুছুন