অতনু টিকাইৎ-এর চারটি কবিতা
এখনই যা করা দরকার
যাদের কথা কেউ বলছে না, আমাদের তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। অবহেলা পেয়ে পেয়ে তাদের মনে শ্যাওলা জমে যাচ্ছে, বিবেকে মরচে ধুলো। তাদের মাথায় হাত রেখে জানাতে হবে ভালোবাসার কথা। জানাতে হবে, 'ফিরে আসা যায়'
তারা ফেটে পড়লে পৃথিবীতে ফুল
ফোটা বন্ধ হয়ে যাবে। তারা যেকোন মুহূর্তে ফেটে পড়তে পারে। যেকোন মুহূর্তে তারা
ভেবে নিতে পারে, আলাদা তারা। আমাদের তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। নয়তো খুব
দেরী হয়ে যাবে।
রিভু বড় হয়ে গেছে ১
কোথাও গাছ কাটা হলে বা গাছ কাটার প্রতিবাদে মানুষ পথে নামছে দেখলে, আমার রিভুর কথা মনে পড়ে। রিভু এসব একদম সহ্য করতে পারত না। রিভুর শৈশব দেখেছি আমি, রিভুর বেড়ে ওঠা। গ্র্যাজুয়েশনটা কমপ্লিট না করেই ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চলে গেল; কলকাতায়।
এখন রিভুর বয়স তেইশ। বি.টেক থার্ড ইয়ার। দু'এক মাস পরপর একটু লম্বা ছুটি পেলে বাড়ি আসে। মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ছোটোবেলার স্মৃতিচারণ করলে, রিভুর তারা'দের কথা মনে পড়ে যায়। বাবা, দাদু তারা হয়ে গেছেন। রিভুর এখন তারা'দের গাছ মনে হয়।
রিভু বড় হয়ে গেছে ২
শৈশবটা সাদা পাতার মতো। হাল্কা দাগও ফুটে ওঠে। রিভু যখন প্রথম জানলো গাছেদের প্রাণ আছে; বয়স পাঁচ কি ছয়। সেই থেকে রিভু গাছেদের সাথে কথা বলতে পারে।
বাবা কাঁচি হাতে বাড়ির ঝাউগাছেের পাতা কাটতে গেলে রিভু বাধা দেয়। বিরক্তির স্বরে বলে, 'বোঝোনা কেন? ওদের লাগে তো!'
ছেলের কথা শুনে বাবার হাসি, রিভু দেখে
বাগান থেকে মাটি খুঁড়ে দাদুকে আলু-পেঁয়াজ, গাজর-মুলো আনতে দেখলে বলবে, 'একদিন ওরা ঠিক বুঝে যাবে দেখো; তোমরা এসব পেতেই ওদের ভালোবাসো।' নাতির কথা শুনে দাদুর হাসি থামতে চায় না; রিভু দেখে।
এখন রিভুর বয়স উনিশ। বি.এস.সি. ফার্স্ট ইয়ার। এখন যখন মা ছেলের সেইসব দিনের কথা কারোর কাছে বলে; রিভু হেসে ওঠে।
বিশ্বজিৎদা
ইদানিং বিশ্বজিৎদার ফোন আসে মাঝে মাঝে। ঠকে যাওয়ার গল্প শোনায় বিশ্বজিৎদা, ভেঙে পড়ার।
বিশ্বজিৎদার দু'চোখে স্বপ্ন উপচে পড়ে। বিশ্বজিৎদা চায় বাঁকুড়া পুরুলিয়ার মাঝে একটা 'হাওড়া ব্রিজ' বানাতে। মেদিনীপুর বাঁকুড়ার মাঝে, পুরুলিয়া ঝাড়গ্রামের মাঝে, একইভাবে বর্ধমান বীরভূম নদীয়া কোচবিহার। গ্রীষ্মকালে পুরুলিয়া বাঁকুড়ার রুখা মাটির ওপর দিয়ে একদিন গঙ্গা বয়ে যাবে; স্বপ্ন বিশ্বজিৎদার।
ইদানিং বিশ্বজিৎদা আমার স্বপ্নেও আসে মাঝে মাঝে। থামিয়ে বলে, 'আচ্ছা অতনু, সাফল্যের জন্য কতখানি ঘৃণা কুড়ানো যায়? কতখানি চোখ বন্ধক রাখা যায় ?বিবেক?
আমি লক লকে জিভের ভিড়ে নিজেদের খুঁজতে থাকি।
খুব সুন্দর লাগলো।
উত্তরমুছুনপ্রতিটা লেখা বেশ সুন্দর
উত্তরমুছুনপ্রতিটি কবিতাই ভালো লাগল। প্রথম লেখাটা একটু বেশি স্পর্শ করেছে আমায়।
উত্তরমুছুন