অচিন্ত্য রায়-এর কবিতা

অচিন্ত্য রায়-এর কবিতা

আমারও ইচ্ছে হয়

শহর আমাকে বলে দ্যাখো -
আমি গাছেদের কত ভালোবাসি।
এই যে গোলাপ সন্ধ্যামনী গন্ধরাজ নয়নতারা কলকে। নানা রকমের গাছ, বাহারি ফুল
 
বুকের পাঁজর থেকে মফস্বলের ধুলো ঝরে। আমারও ইচ্ছে করে শহরকে দেখাই- আমিও গাছেদের ভালোবাসি। কিন্তু কিভাবে দেখাবো- উঠানের নিমগাছ, রান্নাচালার পাশে কদমগাছ, পইটের পাশে বেলগাছ সবাই প্রকাণ্ড তিনপুরুষের বুড়ো...
 
অথচ শহর যে গাছ দেখায়, তারা আমাদের গাঁয়ের- পিগলে, ভোলা, কানাই এসব দস্যি ছেলেদের মত মাঠেঘাটে পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ায়...
 

গণতকার

আমাদের ঘরে একটা উড়োটে লোক
হামেশাই আসত বোঁয়াই থেকে
 
কপালে দীর্ঘ সিঁদুর তিলক
কাঁধে ঝোলা, হাতে ত্রিশুল
মাথা মোটা, সরু পেট
 
সারাদিন বনবাদাড় ঘুরে
সন্ধ্যায় উঠানে বসে
খড়ি দিয়ে সাপব্যাঙ লিখেই যেত
 
মা, আমাদের ধরে হাত দেখাত
রেখা গুনে গুনে বলে উঠত
প্রাপ্তি যোগ
প্রাপ্তি যোগ
 
মাঝে মাঝে ভৈরবী গল্প শোনাত
যার জন্য ভবঘুরে দেখলেই
আজ- ভীষণ মনখারাপ হয়
 

পাখি হয়ে যাই

লেখা একপ্রকার শরতের মেঘ
কখন কোথায় উড়ে বেড়ায়
একজায়গায় জমা হলে
বৃষ্টির মত আমায় স্নাত করে
 
তখন ভিজতে ভীষণ ভালো লাগে
ভিজি, তুমুলভাবে ভিজি
মনের ভেতর জন্মায় সদ্য কাশ
ধবল ফুলকে অলংকার করি
 
তারপর চিঠি লিখি ইন্দুবালাকে
তুমি কোন উঠানে আছো
এসো ,দেখে যাও-
আমি সৃষ্টির উল্লাসে পাখি হয়ে গেছি।
 

প্রহার নামের কবিতা

অনিয়ম আমার একটা বদঅভ্যাস
টর্চের আলোকে গাছের পাতায়
খেলিয়ে খেলিয়ে গলিপথে ফেরা
 
ঝুলে থাকা বকুলের পিঠে
নশ্বর অঙ্গের ডোবা
চাপাট হিংচেলতায় ঢাকা
মাছের পাখনায় খেলা করে ঠাকুমার চাঁদ
 
ফুরফুরে বাতাসের নেশায়
পথের ধুলায় আরাআরি
শুয়ে থাকে বিষধর সাপ
যার উদ্ধার ও মুক্তি
লেগে থাকে প্রহার নামের কবিতায়...
 

হাঁসজন্ম
 
শ্রাবণ শেষ হয়ে এল
কিশোরী ডোবাকে এখনও
কলমীর কোঁচকানো চুল
আঁকড়ে ধরতে পারেনি
 
যৌবন ক্ষয়ে যাওয়া কদমফুল
রাস্তায় ফেলে গেছে
মানত ডন্ডির জলছাপ
আর কুচোকুচো হিমগন্ধ পেলব
 
পাকা তালের মাছিময় সুবাস
ভাদরের জানালায় পাঠিয়েছে
ছাদ পেটার ভাঙা গান
ভাদুর কিছু বোসপুরাতন জামা
 

আমি সেখানে ঘুরছি-কাটানো পালক, গেরস্তের হাঁস জন্মের ভেতর...


২টি মন্তব্য:

  1. "লেখা একপ্রকার শরতের মেঘ" সত্যই তাই । লিখতে থাকো কবি ।

    উত্তরমুছুন
  2. তোমার কবিতা কবে কোথায় পৌঁছোবে জানি না... তবে সারাজীবন নিজের মতো নিজের পথে চলবে বলেই মনে হয় ❤️

    উত্তরমুছুন