চিরঞ্জীব হালদার-এর কবিতা

 কূহক সরণির তাঁতকল ও আমি

        চিরঞ্জীব হালদার


মল্লযুদ্ধের ঘোড়া

মল্লযুদ্ধে নেমে প্রথমেই দান হিসেবে ঘোড়া বাজি রেখেছি।

মাঞ্চুরিয়া থেকে উড়ে আসা মরুঝড়ের মত

প্রতিপক্ষের আঘাত মন্ত্রপূত ঘোড়াই সামাল দিচ্ছে।

 

এই মায়া জন্তুটি এক স্বপ্নের কারিগর।

সব আসবাবের ভেতর অনায়াসে আত্মগোপন

করতে পারে।

দূর্ভেদ্য দলিল থেকে বের করে আনতে পারে

 মিঠে নদীর কল্লোল।

এটা প্রতিপক্ষ জানে বলেই

প্রবল সক্ষমতা হেতু আমার প্রস্তাবের পক্ষে নেমে পড়েছে।

ধরুন আপনি এক  হরিৎ প্রান্তরের মালিক।

ঘোড়াকে আমন্ত্রণ জানালেন তৃণ ভক্ষনের।

সে পর্দাপন করা মাত্র সারা ক্ষেতে দোলায়মান

ফসলমঞ্জরী।

মল্ল যুদ্ধে নামার আগে এই সব ঘোটকশংসা

বাজারে হু-হু দরে বিকোচ্ছে।

এই সব দেখেবুঝে মল্ল প্রতিপক্ষ রণে ভঙ্গ দিয়ে

তার সারা বেনিয়াপনা বাজি রেখেছে খিদিরপুরের

মাঠে।

 

হা হা এই প্রথম আমি কোন মল্লসাগর থেকে ফেরা

বিজয়ী নাবিক।


দৈবচক্র

ভেবো না দায়িত্ববান দৈবচক্র তুমি একা।

 

ফিনিশীয় জাহাজ থেকে ছুটে আসা সবুজ বাতাস

তোমার নাম জিজ্ঞেস করলে বলো

সারা ধারাবিবরণীটাই তোমার  নাম।

 

তোমার আগম নিগম থেকে যে প্রেরণাদায়িনী সঙ্গ

দেন তার বায়বীয় চেলি থেকে যে সুগন্ধ নির্গত হয়

তা কি আতা গাছের বাসিন্দা।

এই দেখুন দৈবচক্র আমিও সবেধন নীলমনি একমাত্র আতা গাছেরই মালিক।

সে গাছে না আ ফলে না পাখি ফলে।

কিন্তু বিষয় হলো চারদানা আতা বীজ পুতে

এক দানের কারিগর হতে পারিনি।

এই না পারাটাই যদি ধারাবিররণীর সাথে

তাৎপর্য সহকারে বর্নণা করতে সক্ষম হতাম

তাহলেও ইলিয়াডের প্রেমিকা স্থান ছেড়ে যেত না।

 

দৈবচক্র তোমার যদি কোন পরামানিক বান্ধব থাকে এই ভগ্ন পাত্রের দিব্বি

আমি তাকে যথাযথ পারিশ্রমিকে ভরিয়ে দেবো।

বিশ্বাস করুন থিয়েটার বান্ধবী কথা দিয়েছে

তার ভাড়া করা পোশাক থেকে পড়ে পাওয়া

হীরের টুকরো প্রণয়কথন তোমাকেই

উৎসর্গ করবে।

 

তাঁতকল

ধরুন তাঁতকল বা ভেসে যাওয়া খড়ের কাঠামো।

কোনটার অধিকারী আপনি নন।

 

তাঁতে যে সব সুতোয় গামছা  নির্মিত হচ্ছে

তার লিঙ্গ নির্দ্ধারণের কোন ভূমিকায়

আপনি অপাংক্তেয়।

আপনি যে মূল্যে খরিদ করুন।

যে কালিতে নাম লিখে রাখুন না কেন

এই উভচর পোষাক থেকে যে ঠিকানা  নির্গত হয়

তা দিয়ে এক পঞ্চায়েত কেমন পোষ মানে

দেখে যান কত্তা।

বরং একটু দরাজ হাততালিতে

মুখরিত হলে দোষ নিয়েন না।

 

জল জানেনা তার দেহ জুড়ে যে প্রবল কাঠামো ভাসমান তার কোন শুক্রদোষ আছে কিনা।

আপনার ঘাটের খুব কাছেই আত্মজার খসে

যাওয়া দেহচরিত্রের ভুগোলের পাতা আশ্বিনের

হাওয়ার উড়তে থাকলে সিরাজের আত্মার কাছে কি কৈফিয়ত দেবেন।

ভেবে নিন আপনি জল। অথবা প্রকৃতসুতোর ব্যর্থ যোগানদার এক তাঁতের মালকিন।

দেহ বল্লরীতে ভরা আশ্বিন কথা কয়।

 দেখুন ভেসে যাওয়া কাঠামোয় তাঁতকল

গুজে দিচ্ছে নীল বর্ণের সমস্ত ধাঁধার প্রশ্নমালা।

আপনি অভুক্ত তাঁত কলের চিৎকার দিয়ে

গড়া খড়হীন মনুষ্যজাতক মাত্র।

 

প্রণম্য কার্তুজ

একটি মাত্র কার্তুজ।

তাও শাসকের কারখানায় প্রস্তুত।

দেহ কলুষিত করার আগে একবার ভাবো

পাতলুন পরা মেঘ কোথায় চলেছে।

 

অই দেখো সারি সারি অপগন্ড অক্ষর।

নীলে চোবানো তাদের সন্ততি।

ঘরে ও বাহিরে  সিক্ত করে যাজকহুতাস।

রাষ্ট্র গৃহিনীও।

 

ওই যে আমড়া ফল

তার হলুদ ত্বক থেকে খসে যাচ্ছে

টক আর বিভ্রমের আঁশ।

বলো পদ্মাসন

সমস্ত তীরন্দাজী কেন এখানে পথ হারায়।

 

এক মাত্র কার্তুজ প্রণম্য মগজের কাছে  নতমুখে।

আমরা তার ছায়া মাত্র।

 

উদ্ধারণপুর

এই রাস্তার নাম কুহক সরণি।

এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভোলেভালা গল্পগাছা

দেহপটিয়সীদের দলবদ্ধ সঙ্গত।

যারা প্রায়ই ভুলে যায় তাদের বাল্যকাল বলে কিছু

ছিল না।

তাদের অতীত বলে কিছু ছিলো কিনা জিজ্ঞেস

করলে হেসে ওঠে আর হাসি থামতেই চায় না।

নিস্পাপ ধুধুুলের তরকারি ছাড়া

যাদের খাদ্য তালিকায় ময়ূরের বিরহগাঁথার

দই মশলাও জুটবেনা।

এই রাস্তায় মায়ের সম্ভাব্য আততায়ীর দেখা

মিলতেও পারে।

 

এমন প্রথা বিমুগ্ধ রাস্তায়

হাই তুলতে তুলতে দেখে নিচ্ছি

এই চ্যা-ভ্যাঁ শরীরে দু' দন্ড অক্সিজেন দেওয়ার

নুন্যতম কাজটা সম্পন্ন করা যায় কিনা।

এখন চোখ না ফোটা পক্ষিশাবকের মত

সীমাহীন কিচিরমিচির করতেও পারে

এমন এক কুহক সরনি।

তার মাঝ বরাবর এক ভোকাট্টা ঘুড়ির পিছনে

হাঁপাতে হাঁপাতে  ঢুকে পড়েছি

যেখানে ফকনার শেষ তামাকে টান দিতে দিতে

সরস্বতীর বুৎপত্তি জিজ্ঞেস করবেন।

এই ফাঁকে তক্কে তক্কে আছি

তার কাছ থেকে কলহপ্রবণ দুই বর্ণ সুষমার

অভিসন্ধি এই কূহক সরনির কোথায় গচ্ছিত রাখা আছে তার ওকালতনামা জেনে নেওয়া।

 

আপনি তো জানেন এখান থেকে উদ্ধারণপুর ঘাট বেশী দূরে নয়।

 

শুধু

তোমার জন্য বিষ এনেছি

তোতা পাখির শিষ এনেছি

তোমার জন্য প্রথম প্রেমের

মৎস্যগন্ধ্যা ফিস এনেছি।

 

তোমার জন্য তিলতিসি ক্ষেত

ভালবাসো ভুত আর প্রেত

তোমার জন্য এক বাক্স

সুদৃশ্য কিসমিস এনেছি।

 

তোমার জন্য হাজার রকম

লক্কা পায়রার বকম বকম

শহর ঢুড়ে ভজহরির

সেফ বিমুগ্ধ ডিস এনেছি।

 

সাজবে পাহাড় তোমার জন্য

অভূতপূর্ব থেকে অন্য

বিদেশ থেকে পাশ্চাত্যের

উড়ন্ত সব কিস এনেছি।

 

মিনার কবিতা

শহীদ মিনার এর মানে কি। আট ক্লাস পাস করা বাবাকে জিজ্ঞেস করবো করবো করে

সেই আজ আবার ভুত চতুর্দশীর কুলোর বাজানা বেজে ওঠে। এখন বাবা নেই। কোন ন্যাড়া মাথা মাউন্টপুলিস ও দেখেছি বলে মনে পড়েনা।

ঢাকুরিয়ার পার্কে শান্তি পিসির মত মেয়েরা কেন

এক পাটি চপ্পল হারিয়ে বাড়ি ফেরে বুুঝিনি।

 

সুধীর কাকা বলেছিল আমার কেন একটা নিক্কন ক্যামেরা নেই।থাকলে জহর লালের হাত থেকে উড়াল দেওয়া গোলাপের ছবিটা আমাকে চিনিয়ে

দিত দুলালের ছেলে সুধীর বলে।আর শহীদ মিনার ও আমাকে আভিবাদন করতো। অবশ্য আমার ছেলেটা এখন বউবাজারে সফল আত্মাবিক্রেতা।

তবু আমি প্রতি সকালে শিখে নিই  লুঙ্গিটাকে মলকোচা মেরে কিভাবে সাইকেলের চাকায় মাইলেজ ভরতে হ য়।

যদিও প্রতি সকালে জেল্লাদার পোষাকে মালিকের বাবা হিসাবে পেন্নাম ঠোকে ছেলের সাতশূন্য যানের চালক।

শুনেছি তার আত্মজ  মহাকাশ গবেষক।

 

বীজ

তোমার ঘুম,তোমার ঘর,তোমার ভাষা, তোমার পথ

একমাত্র জেগে আছে ভবিষ্যৎ ভবিষ্যৎ।

যোগবাড়ি, বিয়োগবাড়ি, গুণবাড়ি,ভাগবাড়ি

ভবিষ্যৎ ভবিষ্যৎ ভবিষ্যৎ বলতে পারি।

স্বামী পুত্র, সতীন পুত্র,পুষনে পুত্র,হীনপুত্র-

এ চিতার জন্য আগুন সম্ভাবনা ক্ষীণপুত্র।

অন্ধ আমি, বীজ আমি,হীনবল,চিত্ত সৎ

তোমার জন্য পিঁড়ি পেতে উদ্বৃত্ত ভবিষ্যৎ।

 

 

বসতপুরাণ

আমরা দু'জন একটি ঘরে থাকি

একটি ছাদ অসংখ্য তার চূড়ো

একটি হাঁড়ি অনন্ত চাল ফোটে

ফ্যান গাললে ঝরবে হলুদ কুঁড়ো।

 

দাঁত ও ঠোঁটের কারুকাজের ভাষা

সেই ভাষাতে নিয়ত বেজেই থাকি

উপচায়সুখ ছাদ ফুঁড়ে আকাশে

আমি ঢোলক তিনি আমার ঢাকি।

 

আমার আয়না তাহারটাও এক

আমরা দু'জন বসত করি ঘরে

জল থই থই হঠাৎ অবুঝ নদী

ছোবলে ভাসায় একলা লখীন্দরে।

 

মৃতপাখির শব

একটি ক্যালেন্ডার মুখ টিপে হেসেছিল অনেক।

 

গ্রীবা দেশ থেকে প্রকৃত ঘামের ক্ণা সর্ন্তপনে

নিরুদ্দেশ ভঙ্গিল জেব্রায়।

এঘরে বাল্যকাল নেই।

ভঙ্গুর বসন্ত পাখি একা একা ডেকে যায় লব্ধ

কিরণে।

এসব কেহ কেহ টুকে রাখে আধার পত্রে।

পৃথিবীর গান্ডিবে তুমিও মহার্ঘ এক আত্মঘাত।।

 

একদিন দেখে নিও সালোকসংশ্লেষে

মৃতপাখির কলরব ফুল হয়ে ফুটে আছে

বুকের বা দিকে।

 

 দূরগামী

আহা এতো সারিসারি লক্ষ্মীমন্ত ইমারত।

শুন-সান শরীর সরণি।

ঢল ঢল শরীরের পকেটে পকেটে এত অজশ্র ছাইদান।

সেই ছাই দিয়ে খানাখন্দ বুজিয়ে একটা সম্পর্ক।

সেখানে কোন উঠোন থাকেনা -আব্দার থাকে না

অবসর ঝোলানো পেরেক থাকেনা।

আলতা চিহ্ন তো দূর কি বাত।

 

অভিযোজন

মায়াবী কলের কাছে জলের বিন্যাশ দেখে কারা---

উটের একাকী মুখ বালিতেই মুখ গুজে

খুঁজেছে সাহারা।

 

যাদুটোন

কি এমন জাদু জানো শোনো যাদুকর

ধার্য এসময় হলো অন্য এক ঘর।

সোনাকাঠি আড়কাঠি রূপোকাঠি বাবা

সবাই দেখেছে হাত আমি দেখি থাবা।

 

অন্যঘর

জলের নিচে ঘর

জলের উপর ছায়া

জলের মধ্যে ক্ষেত

ক্ষেতের মধ্যে নারী।

 

আমায় ডাকতে পারো

ভিন্ন স্বরে ডাকো

ঘুমিয়ে আছে জল

ঢেউ দিতে কী পারি।

 

না পারাটাই পারা

ঘুমিয়ে ফুল ফোটে

কেমন হাসছে দেখো

প্রতিবিম্ব তার-ই।

 

বুদবুদ তার স্বর

জলের নিচে ঘর

জলের উপর কারা

শানায় তরবারি।

 

অর্ন্তবাস চিত্র

অর্ন্তবাস খোলার পর দেখা গেল একটি কঙ্কাল

থরে থরে রতি রক্ত জমিনের নেই কোন আল।

একটি জমিনদার,খাড়া শিশ্নে খোঁজে উন্মাদিনী

নিটোল টিকালো বধু প্রতিমার কাছে নিত্য ঋণী।

পোষাকের প নেই মুখে তার না আছে আগল

তাকে তুমি কি বলিবে শঙখিনি খোল দেহখোল।

কেহ যদি লিখে ফেলে মৈথুনের রঙ্গ ও রস।

ষাটের নিটোল শরীর কতখানি হয়েছে অবশ।

প্রতিটি সঙ্গমের পর পূর্ণ চন্দ্র একা হেসেছিলো

সব সত্যি বর্ণ মিথ্যে আকাশটা সেই একই নীল ও।

সিগমুণ্ড দেখেছো কি, কত নষ্ট মিলন দেখিয়াছো

নেভে আর জ্বলে শুধু শস্যদেহ ঝুটা কিংবা সাচ ও।

কালিদাস জানে ভালো আর জানে লোলিটা বান্ধবী

রতিসার চিত্রহার ইনিয়ে বিনিয়ে আঁকে অপগন্ড কবি।

 

সম্পর্ক

হ্যাঁ সে অপানাকে কাকু ডাকতে পারে।

 

আপনি ভ্যাজাইনা মনোলগ পড়তে পড়তে

পিরামিড প্রদেশের ভিসা যাচনা করবেন।

যদি শুধু

জেগে থাকে মুগ্ধ গোলাপের বজরাই নাভিদেশ।

কখনো আচমন ভঙ্গি কখনও বা

উন্মুক্ত হেমা তিরতির ডেকে ওঠে

মাটির ভাঁড়াড়ে  একান্ত মৌনতার প্রলাপ কথনে।

 

ওই দেখ ইলিয়ট পার্ক

প্রতিটি মানুষবীজ কোয়ার আধারে অঙ্কুরিত

নিজস্ব নাভিতে।

ঠোকাঠুকির শব্দরূপ ধাতুরূপ সমাসবদ্ধ মনোলগ

পরিত্যক্ত যানের পিঙ্ক ডট কম।

 

এই যে লক্ষনরেখা আবহমান সত্য নয়

মিথ্যা যোনিবাসের যোগ্য নাগর।

এসো প্রেম যৌনতার তৃতীয় পুরুষে।


 

যৌনলীন

টিয়া পাখিটা ভাবতে থাকলো

তার ঠোঁট লাল না হয়ে অন্য কোন রঙ হলে

পুরুষ ডিম আর নারী ডিমের এর অনুপাতের কোন

ফারাক থাকতো কি।

 

এক্স আর ওয়াই এর মাঝে যে ভুট্টা ক্ষেত

সেখানে কোন প্রভোকিং শষ্য মাথা দোলায়।

 

বৃষ্টিময়ী বারান্দাকে যৌন শরীর কল্পনা করা কালে স্নায়ুতে কোন স্পন্দন অনুভব করেন।

তাহলে দেখবেন প্রথম সঙ্গম দৃশ্যের ভেতর

হেঁটে যাচ্ছেন পয়গম্বর।

 

 

খেলোয়ার

ধরুন আপনি একজন চোস্ত হা ডু ডু খেলোয়ার।

যে কোন পজিসনে আপনি সাবলিল।

 

ধরুন আপনার উর্দ্ধতনের নাম জবা।

তার লাল টকটকে সেমিজ থেকে

এক তোতাপাখি রের হয়ে আপনার ধর্মযন্ত্রকে

মাঝে মাঝে গান শোনায়।

সে আপনাকে শিখিয়ে দেবে স্বমেহনের উলটো গতি থেকে সাবলিল ব্রীড়বনত পুরুষমুদ্রা।

 

আপনি প্রস্তুত কিনা তা ম্যাসেজ মর্মরে

কতখানি লুকিয়ে রাখতে  চৌখস।

 

আজ জবা ম্যাডাম আপনার সরল রৈখিক

যোগ্যতার পরীক্ষা  নেবেন।

জানেন এই  দেহের সমস্ত আসবাব ক্রিয়ার নাম

অ্যান্টিচেম্বার।

যেখানে শুধু ঢোকার দরজায় কোন দারোয়ান থাকে না।

 

জাইগোটপর্ব

কিছু কিছু অসভ্য ভাবনার কাছে আত্মপ্রতারিত হতে হতে একাকী মহুয়া গাছ।

ঘরোয়া মাদল তোমাকে বলবো আজ সে সব কাহিনি।

চেঁচিয়ে ওঠেনা কোনও অসহিষ্ণু পাখি।

খোলা আকাশের নিচে অকলঙ্ক মৈথুন।

জমে ওঠে তারাদের ফিস ফিস।

নগরের প্রতিটি দরজা জানে কোন টোকায়

কতখানি গুমরি সহবাস।

হ্লুদ কলকে ফুল

বীজে বীজে চারিয়ে দেয় মন্থর অবসাদ।

স্খলিত ঢোলদণ্ড

তুমিও বেজে ওঠো প্রকৃত পৌরুষে।

যে নারী শব্দ করে হাসে না কখনো 

সেও অর্গাজমে উচ্চনাদী।

তাকে কি জিজ্ঞেস করো কে তোমার গর্ভে ঢেলেছে

বপনের পূর্ণ ভঙ্গিমা।

একটি মৌলিক শব্দে ভরে উঠুক তোমার জাইগোট।

 

নিষিদ্ধ ইজম

ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী

কদম গাছের নিরুদ্দেশে ধু-ধু নাবাল জমি।

নামটি শকুন্তল

জলের মধ্য চঞ্চল মীন নিষিদ্ধ এক ফল।

কে দেখেছে কে দেখেছে

মানব অধিকারী

সেদিন থেকে বন্ধ দুয়ার পতি-ই প্রতিহারী।

 

বান্ধবী

কি মোহিনী জানো হে বান্ধবী

না দেখলে দিন তেতো মনে হয়।

 

সাহস যে খুব বেআক্কেলে

উসকিয়ে দাও ওঁচা কিছু ছেলে।

 

দু'হাত ফর্সা কতকাল থাকে

হ য়তো স্বস্তা ভেবেছো আমাকে।

 

আধুনিকা তবু পূজো করো শিব

তোমার জন্য একজিকুটিভ।

 

অপেক্ষার ভাষা

যারা আজীবন মেরুদন্ড ধার করে চলে

তাদের সঞ্চয় ফতুর হয় রঙ কিনতে।

অথবা ছেনাল সোহাগীর মনোরঞ্জনে।

 

একটি মৌলিক রাত্রির জন্য কতকাল

অপেক্ষা করতে হয় তাহারা জানে না।

 

নির্মাণ

গামছা এক মননশীল যৌন পোশাক।

পুরুষ সুতো আর নারী সুতোর মিলনে

তার রাত্রি জাগরণ।

 

সব তাঁতি তাকে নির্মাণ করতে পারে না।

 

পাঠ

আলো এক কর্মধার‍য় সমাস।

মধ্যপদ উঠিয়ে দিলে

নীল বর্ণের কাছে সব হলফনামা

গচ্ছিত না রাখলে নাট্য পরিচালক

সবুজঘরে আত্মহত্যার পাঠ মুখস্থ করে।

 

মাসোহারা

ছক কাটা খোপ খোপ আতঙ্ক

উগ্রপন্থার বাতিল সরঞ্জাম

লটারীতে জেতা অবিবেকী ক্যামেরা

মিথ্যে কথা বলার জন্য

মাসোহারা পায়।

 

সীমান্ত সংবাদ

একটি দরিদ্র সংবাদপত্র থেকে

রামধনুটা স্মৃতিচারণ করতে করতে

পাগলাগারদে অদৃশ্য হয়ে গেলো।

তার ছেড়ে যাওয়া পোশাকের মধ্যে একজন

গুবরে পোকার ছদ্মবেশে পৃথিবী প্রদক্ষিণ

করবে বলে বৃষ্টির স্তব শুরু করেছে।

 

ভোরের আলো ফোটার আগে

কৃষ্ণপাখিটা সেই ক্ণা ঠোঁটে করে

আমাকে সীমান্ত পার করিয়ে দেয়।


হত্যাপর্ব

আমার ছেলে একটি যন্ত্র খরিদ করিয়াছে।

তাহা হইতে কখনও কখনও

বাবা শব্দ উচ্চারিত হয়।

রক্তমাংসের কান আর যন্ত্র নির্গত শব্দের মধ্যবর্তী

যে শূন্যতা

তাকে সম্পর্ক বলে অভিহিত করা যায় কিনা

 আর যদি যায়ও তার কি একক

এই পরিপ্রশ্নে মহামান্য বিদুর নিরুত্তর।

 

এমন প্রপঞ্চপর্বে উত্তরাধীকারীদের হত্যা সংঘটিত

হইয়াছে।

 

কর্মকারক

আমার কাজ শুধু পোয়াতি ধান শিষে

বাস্তুকণার শ্রম একাকী অক্ষরে টুকে রাখা।

উদাত্ত এই কলরবে হৃদয় সম্পর্কের রন্ধন চলে।

অতিসার তার ছায়া থেকে এক বাস্তু সদস্য

লক্ষ্মী পাঁচালির ভেতর সিগ্ধ শ্লোক হয়ে অর্ন্তহিত।

 

সম্ভবত নিউটন তখন আপেলের হৃদ বরাবর

ভঙ্গুর দিনের মধ্যে অস্তমান সম্পর্ক নিচ্ছেন।

অতঃপর আমি এক কেলাসিত পদার্থে

হৃদয়বাস স্থির করিলাম।

 

শববাহক

বিপদ এক আপেক্ষিক তোরণ।

যার উপর থেকে  সমস্ত বর্ণরা

জেগে থাকার মাহাত্ম খুঁজে বেড়ায়।

এমন জ্যোৎস্নালোকিত প্রান্তরে কারা

কালপুরুষের শব বহন করতে করতে মিলিয়ে যাচ্ছে।

 

অমিমাংসা

ডাব একটি অমেরুদন্ডী ফল।

যৌবন বাদ দিয়ে কুঠার এবং কাস্তের

কোন ভূমিকা থাকতে পারে না।

এরকম এক সমীকরণে

স্কোয়ার আর কিঊব রুট বারবার অমিমাংসিত।

 

পারিশ্রমিক

যে গণিকা পারিশ্রমিক হিসাবে

সেরা খদ্দেরের থেকে অন্ধ আয়না আদায় করে

তার খতিয়ান নম্বর আমাকে

কে বলে দেবে।

প্রতি রাতে ঠিক ঠিক সৎ বানিজ্যের পর

দিনের অলংকার হিসেবে তার আত্মাকে

খুঁজে বেড়ায়।

 

প্রচলিত

যাত্রী বোঝাই নদী থির তার জল

আমাদের ছোট নদী চলে ঢ্ল ঢ্ল।

দুই পাড় ঢালু নয় গোপন গভীর

সিঁড়ি জুড়ে অন্ধকার দেহ জুড়ে ক্ষীর।

দুই পাড়ে শিশুদের কচি কলতান

গাঢ় জলে ভেসে যায় আরতি আজান।

অন্ধকার দুই পাড় পড়ে থাকে  বালি

ওপারে মরাল জাগে এপারে মরালি।

 

এপার -ওপার

 দুই ঠোঁটের মধ্যে ভরা দুই ঠোঁট ওহে বাৎসল্য

মধ্যে বাংলাদেশ, দু'ধারে ভারতবর্ষ কে বললো।

ওহে জল, কি তোমার ঠিকানা সমতলভূমি

উপছানো ইলিশের দু'পায়ে মল, হাতে ঝুমঝুমি।

টলো মলো ডাক এসো বেড়া টপকে ওহে হাতছানি

গোসলের জন্য এনো পদ্মা-মেঘনার এক বদনা পানি।

 

 

আমি

আমি নামে একটি নদী

জিজ্ঞেস করি কোথা থেকে এলে-

কখনও কি ডুবিয়েছো খড় -কুটো কিছু এলেবেলে।

শাপভ্রষ্ট জঞ্জাল তাহাদের মুক্তি হয় কিসে

আমি  নদী চুপ থাকে

প্রশ্ন করি

কতখানি অমৃত আর কত খানি ভরা থাকো বিষে।

 

 

চেনাচেনি

আমরা পরপর তিন জন

শুয়ে আছি। পরস্পরকে চিনি।

গা ভর্তি গহনা।ঘুমোতে পারিনা।

আমরা নিদারুন ডাকাতিনী।

 

তরাজুপত্র

মেগাস্থেনিস আমার বাবার বন্ধু ছিলেন।

নগরভ্রমণে যখন এ পাড়া দিয়ে যেতেন, তামাকু সেবন হেতু অামাদের দোকান সংলগ্ন কাঠের বেঞ্চে

দু' দন্ড জিরিয়ে নিতেন।বলিতেন- "মোহন তোমার

তরাজুখানি এতো সৎ যে আমি আহ্লাদিত।

উমাচরণ কর্মকারের বাসস্থান কোথায় বলিতে পারো"।আমি মাতৃগর্ভ হইতে স্পষ্ট দেখিয়াছি তিনি দুই দিকে  মস্তক আন্দোলিত করিয়া তাহার অসামর্থ গোপন করিয়াছিলেন।

 

উমাচরণ কে আমি দেখিয়াছি।তিনি নিষ্ঠাবান ধাতু নির্মিত তরাজুর উপর কয়েকটি সাদা অক্ষর।

খরিদ্দার এর সন্তুষ্টি হেতু ডাইনে ঈষৎ ঝুঁকিয়া থাকিতেন। মাঝে মাঝে টোকো ঢ্যাঙা লোকেরা

নিন্দার্থে পাষাণ দেখিবার ক্ষীণ অবসরে মুখগহ্বরে

বাদাম চালান করিত।কিসমিসের গুণাগুণ পরখ

করিবার ছলে কিসমিস পকেটস্থ করিত।পাষাণ শব্দটিকে আমি সমূহ ভয় পাই।

 

আমি ই-মেলে মেগাস্থেনিস কে জানিয়েছি আপনি

কবে এ ভগ্ন নগরে অধিবাস করিবেন।আমার ঠুনকো সামর্থে উমাচরণ কর্মকারকে দুই মেগাবাইট স্পেশের মধ্যে আটকাইতে অক্ষম।হে চির পিতৃসখা

 - আপনি কবে পদধূলি দেবেন ফিরতি মেলে

অন্তত জানাইবেন।


মূর্খ

মূর্খকে ধিক্কার জানাতে ভুলে গিয়ে

তার চমকপ্রদ পোষাক ঘিরে শুরু হয় মহোৎসব।

তখন যানজটের কোলাহলে

এক চপলমতি বালিকা হারিয়ে ফেলে

মূল্যবান খেলনা।

এ সময় সাইরেন বেজে উঠলে

নিজস্বতা লোপ পায় কাদের?

অথবা নিজস্ব ভূমির কাছে কারা

আত্মগোপনের চতুর সংলাপ শিখে নেয়-

 

মূর্খটা এই সব জেনেছে বলেই কী

বহিস্কার পত্র জরুরি হয়ে ওঠে।

ওহে তোমার ঘর কোন গেরামে-

খিদে পেলে কি জ্যোৎস্নার বার্লি গুলে নাও?

 

নির্বাণ

নিজের মাংস ঝলসে নিচ্ছি মধ্য রাতে

আগুন জ্বালাও কাঁথা কানি হাড়-হাভাতে।

গাছেরা সব ঘুমিয়ে আছে ছেলেপুলে

নিজের মাংস খেয়ে নাচি দু'হাত তুলে।

 

ভূমিকাহীন একটি কবিতা

কোন কোন ক্ষরণ বৃষ্টিপাতের থেকেও মুখর।

এখানে ভ্রমণ মানে ষোড়শী চন্দ্রমার জন্মদিন।

কোন কোন পাপ অনেক পুণ্যের থেকেও ভাস্বর

এখানে তাবু খাটাতে নেই।

 

কোন কোন ঋতু অসম্ভব দুঃখী

অথচ সূর্যমুখী ফুল গুলোকে দেখো

কী ভীষণ অহংকারী।

 

কোন কোন আত্মহত্যা রাখালের ইচ্ছায়

সংঘটিত হয় এখবর জানাজানি হতেই

সব পুরোহিত আর ডোমরা

এক যোগে ঠিকানা হারিয়ে ফেলেন।

 

মুখবন্ধ লেখা ছাড়া কবিদের কিই বা

ভূমিকা থাকতে পারে।

 

প্রাসঙ্গিকতা

ভূশুন্ডি নাচ এখন তুমি নাচো

এখন তুমি সিদ্দি খাবে ভাঁড়ে,

তোমার কথা বলছে জনে জনে

এখন তুমি শত্রু ভাবো কারে।

 

তোমার কিছু ভ্রান্তি ছিল সোজা

মাথার উপর পাহাড় প্রমান বোঝা।

অপপ্রচার কারা রটায় ভালো

পুরুষ মানুষ একটু সহ্য করো।

 

তোমার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী মৃত

তাহার কাছে নও কী উপকৃত।

তোমার কথা ক'জন ভাবে ঠিক

তুমি কি আজ তেমন প্রাসঙ্গিক।

 

পর্যটন

নদীতে এখন মদ্যপ কলতান

কুলে বাহকেরা অপেক্ষারত ডুলি

উজানে কিংবা ভাটার আস্বাদনে

সান্ধ্য লোকালে ফেরোনি শ্যাওড়াফুলি।

 

পর্যটনে পরিবার সহ এসে

পরীরা কেড়েছ নজর মেঘেরদেশে।

উপবীতে যত আলোর পাহাড় ছিলো

নিরক্ষররা বেচেছে দু'টাকা কিলো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন