ফেরদৌস লিপি'র কবিতা

ফেরদৌস লিপি'র কবিতা


সিঙারা-১
 

এখন,একটা অতিকায় কালোজিরার ভেতর মুহূর্তের ট্রেনগুলো ১-১ কোরে সংখ্যাতীত-আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতেছে ঘুম ও জাগরণের সমান্তরাল == রেললাইন ধরে আর গতির ঝাপটায় অনবরত কাঁপছে নীল আলোর তন্তুগুলো ভয়ে।কিন্তু আমি মোটেই আতঙ্কিত নই আমার এই একমুখি→ ঝটিকা-ভ্রমণ বিষয়ে,বরং আশাবাদী,কারণ প্রতিমুহূর্তেই আমি পেয়ে যেতেছি একজন কোরে নতুন সঙ্গী।

 

এখন,ছাদটাকে মনে হতেছে সম—তল মাঠ,আমি আমার অতীতের অ্যালবাম মেলে দেই মাঠে আর চুম্বক অংশকিছু বাছাই করে তুলে নেই আর খেলি—অতীত,আমি আর ঘোড়দৌড়রত ফ্যা*ন। আমি [ছাদটার] আয়তক্ষেত্রিক আকারকে অস্বীকার করি আর ততটাই হয়ে যেতেছি একরত্তি 0০· যতটা না হলে ছাদটার বিস্তার অসীম হয়ে যায় আমার কাছে এবং খেলতে থাকি জমানো মূহুর্তগুলোকে বেহিসেবী খরচা করে করে আর একটা হা-করা দেয়ালঘড়িতে প্রতিবাদহীন ঢুকে পড়ছি খরচের সমানুপাতে কারণ আমি জানি চক্রা*কারে পৌঁছে যেতেছি সময়ের নিউক্লিয়াসে > •

 

এখন,বিছানায় পায়চারী করতেছে চাদরের অগণিত ঢেউ~~যেন আপাদমস্তকে ভেসে উঠছে মর্মর-পাথুরে দ্বীপ আর পরিধি কেঁটেকুটে কাঠামো হাইজ্যাক কোরে নিয়ে যেতেছে অন্ধকার,নিরুপায় তাই হন্তদন্ত পা-পা অস্তিত্বের ঘুলঘুলি গলে গথিক ধাঁধায়—অন্তত একটা পুরনো ছায়ার নাগাল পেয়ে যাই যদি—


 
সিঙ্গারা-২
 

কের্মে ঘনত্ব কমে গ্যালে— কাঁচ>জল>মরীচিকা>শূন্যতা
সুতরাং শূন্যতারে ঘনীভূত কইরে তুমি কাঁচ পাইতে পারো যা তোমার অস্থিত অবয়বরে কিছুটা বাগে আনতে পারে,তুমি কত
 ℅ তোমারে দেখতে পারো?
 

অবিশ্রান্ত আমরা আমাদের শুন্যতার ক্ষত সারাইতে চাই।তাই পাইপ লাইনে একের পর এক পুইরে দিতেছি দিন ও রাত্রি নামক ঝাঁঝালো মলমবটিকা—এরা ভালো  উদ্দীপক আর আরামপ্রদও বটে।কিন্তু এসবই সাময়িক—ব্যথা নিবারণের জন্য কিংবা ক্ষত সারাবার জন্যে—অন্তত বয়সের বিভিন্ন স্তরে আমাদের আরগ্য বিষয়ক অভিজ্ঞতা তাই কয়।আসলে ক্ষত সারে না কিছুতেই, আমাদের দৃশ্যত ঝকমকে চাওয়াগুলোয় গিজগিজ করতেছে অর্ধহীনতার প্যাঁচপ্যাঁচে পোকা। 

 

মাঝরাইতে গ্রিলে রাইখো হাত,শুঁড়শুঁড়ি পাইলে দ্যাইখো —জানলা উগরানো শীতলতা কিছু হাতের রোম-সিঁড়ি ধইরা উঠে যাইতেছে তরতর—কি বুঝলা হে— ধাতববস্তুরও আছে কিছু সহজাত বোধ,আছে উষ্ণ হবার আদিম আকাঙ্ক্ষা কিছু।সুতরাং নিদ্রাচর পর্দাটারে ওর বুকের উপর দিয়া হাঁইটা যাইতে দাও।


সিঙ্গারা-৩

 

প্রকৃতপক্ষে বুকের বোতাম খুলে শুয়ে আছে ইটের লাল আর অদৃশ্যে—কার দেহ ভস্মে লেগে আছে এতকাল আগুন(!)—পাশেই ছায়ার জ্যামিতি খুলে উঠে গ্যাছে ষাট ডিগ্রি কোণাকুণি প্রায় একটি গিনি ঘাস।আর এইসব আকুপাকু ভাবনার খড় উড়ে যায় হ্যালুসিনেশনের ধোঁয়ার পাকে পাকে—এই ফাঁকে,কখন যে বুড়ো বিকেলটা আমারই পায়ের ক্রাচে ভর করে হেঁটে যেতেছে কোনো দিকে ঘাড় না ঘুড়িয়ে—

 

জল—স্বভাবে প্রকৃত/অপ্রকৃত হইতে পারে।

 
ধরো,এক ফোঁটা প্রকৃত জল 'ক' > জীবসমষ্টি 'খ' এর সৃষ্টি > রুপান্তর(মৃত্যু) 'গ' > আকাশ 'ঘ' > যা বিন্যস্ত উষ্ণ-বাতাসে হয় বিম্বিত —মরীচিকা *ক*> যা একটি অপ্রকৃত জল।
 
কি-হে—
  তুমি কি এ-সিদ্ধান্তে আসতে পারতেছ—বিবিধ সৃষ্টিতত্ত্বে বর্ণিত জল একটি অপ্রকৃত/বিভ্রম জল!

তাও কমসে কম পাচশো কোটি বৎসর পৃথিবীর জন্ম — এইসব হিসেবপাতির গু লেইপ্যা দিয়ে গ্যালো যে মহারথিরা আমাদের বিশ্বাসের গ্রাউন্ডে তারই নিশানা চিহ্নিত চৌহদ্দী থেকে অঙ্কুরিত হয় আমাদের গেঁজানো ইতিহাস। এ মতন এক বিলিয়ন বৎসর আগে পানির জরায়ু জন্ম দ্যায় প্রথম—এককোষি জীবের ছাও— এরও বহুপর বহুকোষির আবির্ভাব,আমরা পেলাম কায়েমীস্বত্ব নির্ধারিত ভৌগোলিক সীমানায় আর মোহন হাঁড়িরা অতিউৎসাহী উদযোগে নেচে-কুঁদে শুরু করলো পৃথক
সংসার—অভিমানে আমাদের কোষ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো ক্লোরোফিল—আমাদের পরনির্ভরশীল করে দিয়ে।


অনু স র
 
 


পৃথিবীর বিস্তীর্ন উত্তলে গা এলিয়ে দিয়েছে বয়স্কা রাত,তার আয়ু নির্ণায়ক কাঁটাকম্পাসের মাপজোখ চলছেই বৃত্তাকারে,এখন বিনিদ্র কাঁটারা দিচ্ছে বিক্ষেপ— ৩ টা ২৭। আর দেয়ালের আপোষহীন শাসনের মুখে এখনও একটা ফড়িঙ—স্থির,নিরুপায় দাড়িয়ে এক কোণে—ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।আসলে আমারই আদেশে এসেছে সে অনিচ্ছায়,বিগত বিকেলে—দুটো আঙুলের কড়া প্রহড়ায়,এক পারদ-অস্থির মেয়েশিশুর ধনুকের ছিলার মতো একরোখা আবদারে।যেন প্রবল আক্রশে,একটা ঘাসের অলিন্দের সবুজ প্রান্তর ধূ-ধূ ফাঁকা করে দিয়ে আর তাদের অসমাপ্ত কথোপকথনের ভগ্নাংশ কিছু বিক্ষিপ্ত ছুঁড়ে দিয়ে—আচমকা শব্দে —কেঁপে উঠেছে ঘাসটির লুকিয়ে পড়া পায়ের অদূর।
 
আর এখন;ঠিক যতটা কাছে এলে পরে, একটা ফড়িঙের নিশ্বাসের থরথর হাত মুঠোয় মুড়িয়ে নিতে পারে
আমায়,ততটাই এসেছি কাছে তার অভিমান ভাঙাবার অভিপ্রায়ে।দেখি—তার চোখের জেলিস্বচ্ছ পর্দার আড়ালে —ম্লান আলোর পোশাক পড়ে বসে আছে চিন্তাশীল এক পড়ন্ত বিকেল—উবু হয়ে।আমার হোঁচট-খাওয়া-হাত রাখতে গিয়ে বিকেলটার মলিন কাঁধে,দেখি—আস্তে আস্তে উঠে সরে পড়ছে পড়ন্ত বিকেল দৃশ্যপটের চোরাগোপ্তা দরজা গ'লে।আর ফড়িঙটার চোখের অতি-আনুবীক্ষণিক সীমাহীনতায় নেমে আসছে সংগোপনে শূন্যতা বোঝাই অসংখ্য জ্বলেজ্বলে প্যারাসুট।এবং ঝলকে ঝলকে বিম্বিত হচ্ছে তাতে— টুকরো টুকরো 'আমি'র প্রতিবিম্ব—আর তা অনু স র
  ণ করছে —পড়ন্ত বিকেলটারই দিগন্ত টপকানো সারি-সারি সুদীর্ঘ ফিকে-লাল পদচিহ্ন—



দৃশ্যরা অধিকৃত



মোদ্দাকথা,দুপুরের আবর্তে তালাবন্দি—ঐ অসংযত চিল।পৃথিবীর বাইরে থেকে ক্রমাগত জুম করে দ্যাখো যদি কর্কটক্রান্তির এই লোকেশন—ঘূর্ণমান টাওয়ারের কাঁধে ভ্রমণরত পর্যটক ঐ চিল—অথচ,এইখানে,উঁচু টাওয়ারটার উপর —আমি দেখি তাকে অস্থির,ব্যতিব্যস্ত ঠোঁটে উড়াইতেছে বিচ্ছুরিত ও চূর্ণিত শব্দ যেসব কম্পমান আর বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে দিতেছে অস্পষ্ট অর্থের স্পার্ক এবং অবশেষে স্থিত হতেছে আমার বোধের তলানিতে এসে।চারপাশে অনন্ত প্রসারিত একদানা চিনির ভেতরকার ধূধূ স্বচ্ছতায় —আকনাদির লতাগুলো হয়ে আছে টানটান— জিরাফের বিবর্ধিত গলাকে ফলো করে।আর টাওয়ারের ছায়ায় ভবঘুরে কবরেরা যেন ঘুমিয়ে পড়া কচ্ছপ এবং একনাগাড়ে ঝিঁঝিদের পাখনার তান্ত্রিকতা—জমায়েত করছে নীরবতার অথই ক্ল্যাপস—এবং একটা অপ্রতিরোধ্য কেন্দ্রাভিমুখি টানের ঘোরে হন্য হয়ে খুঁজতেছি সুরঙ্গের মুখ —ঢুকে যেতে ঝিঁঝিদের ঝোপে।

আমরা দাঁত কেলিয়ে হাসি
 


ফ্লুরোসেন্ট বাতি
   ~সুঁইচ টিপে দিতেই
ফুটো করে দেয়া বেলুন হয়ে গ্যালো
আলোগুলোর স্বাস্থ্যের জৌলুশ।এখন
হা-মুখো ঘুমের পেট দেখছে—জমকালো ডিনার,যেন মুঘল হেরেমের দস্তরখানে বাহারি প্লেটে অনড়—আমি,খাট আর লোভনীয় ফ্ল্যাটের-মাংশ।অফ-পিক আওয়ারে চলছে এ তৃপ্তিপ্রদ ভোজনপর্ব,চটপট শব্দে হজমের সব জটিল প্রসেস—পেটুক ঘুমের আঠালো গ্রাসে কেতাদুরস্ত এনজাইম তুলছে ডিম ফেটানো জলজ টিউন আর ক্ষরিত হচ্ছে চেতনানাশক অম্লীয় উদ্দীপক—গেঁজানো খাদ্যপিন্ডে। এছাড়া গারিবাল্ডি পোশাকে ভেলকিবাজ স্বপ্নেরা এখন পরিপাকে আস্থাভাজন প্রভাবক।
 
         (সাময়িক বিরতি) 
 


শে
ষে,
   হাই-তোলা আমরা—অধিকৃত, হালকা-ধোঁয়া-ওঠা এক চার্মিঙয়ের ঘোরে —আমাদের খুঁজে পাই পরিস্রুত,ঝলমলে এক কমোডের উপর। আর আমরা দাঁত কেলিয়ে হাসি—আহ্,কী দারুণ এই ভোর!




নির্জন হেঁটে যায়
 

 
কী যে করি—
অসহ্য;কোথা থেকে আসছে সময়ের করাতের এমন ঘর্ঘর?ঘনঘন,
 
আজকাল জানলার সামনে এসে যাই,বিশেষত— রাতে,হচ্ছে যেটা প্রায়শই,জ্যোৎস্নার-শাদা ফুটো কোরে বেরিয়ে আসছে মোহেনজোদারোর ধারালো কোলাহল —
হাতের তালুতে গাল রেখে স্থির,অনেকটা ভ্যান গগের ড.গ্যাশের ভঙ্গিমায় বসে থাকি নিরুপায়,শুনি—শান্ত রাতের দ্রাবকে এ দ্রব-কোলাহল মিশে গিয়ে তুলছে
জলের শব্দময় বুদ্বুদ।
যেন হঠাৎ,জানলার ধারে উড়ে এসে এ্যাক জাদুর রুমাল—চকিতে বিম্বিত করে দিয়ে গ্যালো সিন্ধুর সুদীর্ঘ উজ্জ্বল পাড়!এবং পাথরে পাথরে—অজ্ঞাত অক্ষরের সমাগম—বিশুষ্ক চরাচরে স্বেচ্ছাচারি।আর অক্ষরের খোপে খোপে সুগন্ধি ডানা ঝাপটায় থেকে থেকে দূর্বোধ্য ভাবনার পাখি।এরা সুধোয়,এদের নরম ও নিটোল গলায়: কেবলই পাঁচ হাজার বছর—ওরে ছোকরা,এ আর এমন কি?ভেবে দ্যাখ্ ,এর চেয়ে কতকাল আরও বেশি(!)—

কবিতার জটিল ইঙ্গিত নিয়ে বুকে তোর সুপ্রাচীন পৃথিবী নির্জন হেঁটে যায়—

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন