প্রসাদ সিং এর কবিতা

প্রসাদ সিং এর কবিতা

পৃথিবী মরে গেলে 
      
              
পৃথিবীর যেদিন আবার পুর্নজন্ম হবে
আমি বসে থাকবো চাঁদের আগুন মাটিতে
আর ছুঁড়ে দেব কবিতার বীজ এই ধরাতলে
 
মানুষ শুরু থেকে বড় হবে কবিতার ছত্রছায়ায়
বাল্মীকি আবার আসবেন প্রথম কবিতা লিখতে
আমি নিঃসন্দেহে তার সাথে জুড়ে দেব তর্ক
 
ভগবানরা এলিয়েন ছিলেন কি না
তার তর্ক ছেড়ে বলো
আমরা আবার মানবিক হতে পারবো তো
 
পৃথিবী মরার খবর শুনে দৌড়ে আসবে সব ধর্ম
মহাকাল, ডুমস ডে, কয়ামত
লাইন পড়ে যাবে দিগন্তরেখা পর্যন্ত
 
তবুও আমি অপেক্ষা করবো পৃথিবীর মৃত্যুর 
                   

লোহার আংট‍া ও মোম 
                         

সবার রোমকূপেই আছে আংটা ঝোলানো
                                উষ্ণ আদর শেষ হলে
আমরা চুম্বকের মতো বিকর্ষিত হই
 
আমি আগুন হলেও গলতে কেউ চায় না
সে মোমই হোক বা লোহার আংটা
                     আদৌও কি তারা হাঁটু ভাঁজ করেছে
 
গোলাপগুলি ঝরে গিয়ে
                             শুধু কাঁটা নিয়ে কাণ্ডটি
কি নির্মম দাঁড়িয়ে থাকে
 
কি বলতে চায় সে ?


দায় 

ঈশ্বর বিশ্বাসীরা বেশি সুখী
তারা দায় চাপানোর জন্য কাউকে পায়
অথচ ঝগড়া, তর্ক, বিতর্ক এর অবকাশ নেই
 
আমার কাঁধ অবশ্য প্রত্যাশাদের ভারেই ন্যূব্জ
দায়দের জন্য কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই !


কবিতার দিন শেষ 
             

বেডরুম থেকে বাথরুম
সবেতেই কবিতা ছড়ানো
একটাও গাছ বেঁচে নেই আর
                    এতটা স্বার্থপর আমি !
 
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলে --
"বইমেলা তাহলে ঘরে বসেই ! "
বাঁচুক কবিতারা
বেঁচে থাক গাছেরা ।


ক্ষণিকের দেশলাই কাঠি 
      
        
অন্ধকারে থাকতে থাকতে
ভাবি
আলো জ্বালিয়ে নেব
 
কিন্ত যেই জ্বালিয়েছি দেশলাইকাঠি
আমনি চোখগুলো যায় বন্ধ হয়ে
 
সস্মুন্মা কাণ্ড, একী বিশ্বাসঘাতকতা তোমার
তুমি আলো চাওয়া না তবে
 
তাহলে কি শুরু হচ্ছে তোমার অভিযোজন
এই অন্ধকারে থাকার
 
এই অন্ধকার উৎযাপনে
তাহলে অন্তঃত একটি সিগারেট হোক
 
তাতেও দ্বিধা দ্বন্দ
এর জন্যও চাই দেশলাই এর ক্ষণিকের আলো



একটা কবিতার মৃত্যুর পর 
          

একটা কবিতার মৃত্যুর পর
আমি তোকে ভালোবাসতে পারবো না
সেই চরম কবিতা শীৎকার মূহুর্তে
ঈশ্বর উপাসনা বা নরক ঘৃণা
তাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়
 
একটা কবিতার মৃত্যুর পর
রাষ্ট্র কবিতা না পড়ে চুলোয় যায় যাক
সমাজটা শোধরানোর দায় না নিতেও পারি
বা এই তথাকথিত আধুনিক কবিদের কবিতায়
কুম্ভিলকবৃত্তি চললে চলতেও পারে
                             

ঈশ্বরের অধিকার নেই
  
   
ঈশ্বরের দিকে মাথা ঝুঁকতে থাকলে
আমি বালিশে মাথা রেখে ঘুমোই
 
ধরে রাখি নিজ পুরুষাঙ্গ
ঈশ্বরের অধিকার নেই আমার স্বপ্নে আসার !
 
জানি,  আর কয়েকটা পাথর
তারপর আলিবাবার গুহা, সত্তরটা অপ্সরা !
 
তুমি বলতেই পারো এটা সান্ত্বনা
তাছাড়া ঈশ্বর আজ পর্যন্ত
 
সান্ত্বনা ছাড়া আর কি-ই বা দিয়েছেন !


প্রেম আমার কাছেই ছিল 
             

প্রেম আমার কাছেই ছিল
ঠিক যেন বুকপকেটে
সে শুনতো আমার হৃদৎস্পন্দন রোজ
 
শুধু তথাকথিত সামাজিক বিয়েতে লুকিয়ে আছে
নীচতম যৌনলালসার রিরংসার ভিত্তি
আর আমার সামাজিক বিয়ের স্ত্রী একদা বলবে
 
তুমি যেন আমাকে
 
ঠিক সেই ভাবে ভালোবাসোনা !


কবিতা, কাছাকাছি থাকো
        

কবিতা তুমি আমার কাছেই বসে থাকো
এমনটা তো নয় যে, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে প্রচুর
বা এত রোদ যে একটা কোল্ড ড্রিঙ্ক চাও
 
শুধু নির্জন দিনে কাছে এসে কি করবে তুমি
যদি পারো তো কয়েকটা রঙিন শব্দ দিয়ে যাও
আমি তা কালার জেরক্স করে নেব
 
তোমার মুখ না থাকলেও
সভ্যতার শেষ দিনে মানুষ বোবা হলে পর
তারা  ছেঁড়া কাগজে খুঁজবে তোমায় ডাস্টবিনে
 
কবিতা তুমি কাছেই বসে থাকো
কাঁধে হাত রাখতে না পারলেও
আমি শব্দের আভাস পাই সারা শরীরে
 
আমার কমদামি কলমের কমদামি গ্রিপ
তুমি যদি নামতে চাও
খুব রুক্ষতা পাবে তুমি
 
প্যাপিরাসে তুমি বেদনা পাওনি
বা ছিল ঐশ্বরিক কিছু
জানি, ছলনাতে তুমি কোনোদিন নেই
 
কবিতা, কাছাকাছি থাকো


নিরুত্তেজক 
             
আমরা আবার ফিরে যাচ্ছি নগ্নতায়
শুধু রাস্তাটা শৈল্পিক, উত্তেজিত উদ্দামতায় ভরা
একটু একটু করে কাপড় পরেছি
একটু একটু করে কাপড় খুলবো
তারপর আধুনিকোত্তর হবে শরীর মন
আর মেতে উঠবো স্বাধীন বন্য সঙ্গমে
 
তারপর আবার পোশাক পরতে শিখবো
সেবারও আসবে শিল্প
একটু একটু করে নগ্ন হয়েছি
একটু একটু করে কাপড় পরবো
ভালোবাসা আবার রং পাল্টাবে
রহস্যের মাধ্যমে শিহরিত হতে শিখবো আমরা

                                   /

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন