বিশ্বনাথ পালের কবিতা

বিশ্বনাথ পালের কবিতা


নাম
 
যাদের নাম সুন্দর, অন্তত আমার মতো
মধ্যযুগীয় নয়, তাদের খানিক ঈর্ষাই
করি বলা যায়, শেকসপিয়র সাহেব
যা-ই বলুন না কেন, মন কাড়ায় তারা
পারদর্শী, নামই তাদের আস্থার মাপকাঠি,
জুঁইয়ের গন্ধ হয়ে, রাখালিয়া বাঁশির
সুর হয়ে ছড়িয়ে পড়ে হাওয়ায়,
লোকে শুনেই মুগ্ধ, সহজে ভোলে না।
আর কিছু অসুন্দর নাম নীরেট পাথরের মতো
শুধুই সন্দেহের জন্ম দেয়, মাটিতে গড়াগড়ি খায়,
বাতাসের কাঁধে ভর দিয়ে 
শিমুলবীজের মতো ফাটে না

 
ভালো থাকা
 
পরনিন্দা খারাপ। তবু পরনিন্দায় মনের পাথর
পাখির পালক হয়ে ওড়ে। ফুরফুরে হাওয়া বয়, দু’দণ্ড
ভালো থাকা যায়।

গালাগাল দেওয়াও খুব খারাপ। তবু গাল দিয়ে দেখি
বেশ ভালো থাকা যায়। চমকে উঠি খারাপের এত
ভালো গুণ দেখে। অশান্তি কমিয়ে বেশ অহিংস থাকা যায়।
কিছুই তো পারি না, কায়ক্লেশে গুঁতো খেয়ে
বেঁচে থাকা ছাড়া, অক্ষমের অস্ত্রও যদি
চালাতে না পারি, বারুদে হব ঠাসা।
তবে রাস্তায় জল-কাদা ছেটানো নির্মম ড্রাইভারকে
যেভাবে খিস্তি দিতে পারি, অফিসের 
খিটকেল বস ও কাঠিবিশারদ সহকর্মীটিকে 
সেভাবে পারি না, কিন্তু মনে মনে, ১৫০ ডেসিবেলে... 
 
কাঞ্চনরঙ্গ
 
রামবাবুর এখন  টাকা হয়েছে
কিন্তু অশান্তিও বেড়েছে কম নয়
রামবাবুকে এখন খুব কম লোকই
মানুষ মনে করে, ভাবে খদ্দের
ফলে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় দিনের মধ্যে
কতবার যে তাকে দ্রব্যগুণ শুনতে হয়
বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলেও
শুনতে হয় জীবনবীমার কার্যকারিতা
বন্ধুর বইয়ের দোকানে গেলেও
কোন গ্রন্থপাঠে কী মহৎ লাভ— শুনতে হয়
অথচ বই তার নিজের পছন্দেই কেনা পছন্দ
টাকা না থাকার দিনগুলোও মনে পড়ে তার—
কত করুণা ও উপদেশ বর্ষণ
কোন পথে সহজে উপার্জন সম্ভব
তার হাজার ফন্দিফিকির
 
মহাকাল
 
কাকদ্বীপ থেকে কলকাতা
কলকাতা থেকে কোচবিহার
এ-মঞ্চ থেকে ও-মাচা
লাল বা সবুজ পাঞ্জাবি পরে
ছুটে বেড়াচ্ছে সঙ
জোয়ারে ভাসছে সমাজদেয়াল
মুহুর্মুহু হাততালি দিয়ে উঠছে
তুমুল সমীকরণ
প্রবল শব্দে কান পাতা দায়
চোখ ও হাততালির আড়ালে
কুয়াশা ছড়িয়ে নীরবে হাসে

                        একা মহাকাল। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন