মহানবমীর গল্প

অন্তর্যামী


সৃজা রায়


হঠাৎ সবাই চুপ করে গেল।পায়ের তলার মাটি অনাসক্ত জিম্মায় তীরের ফলার মতো বিঁধতে থাকলো,লোমকূপের মুখে।বিগ্রহ টলে উঠতেই, আপনে আপনে হলো সাতজন্মের শত্রু।আশ্চর্য এক নিনাদকারী আমতলা থেকে উঠে এলো সটান দালানে।বিধিনিষেধ, ধর্মযাত্রীদের ভীড় উপেক্ষা করেই ছাঁই -ভস্ম মেখে দরজার বাইরে উপস্থিত হলো।নোংরা কাপড়ের ঝাঁপি থেকে বের হলো,নামতার মতো গুণিতক ও গুণনীয়কে ভরা ফর্দ।বিড়বিড় করে বলে চললো অজস্র বেমানান কবিতা।আড়ষ্ট শব্দের বিস্তারে পরিস্থিতি, আপেক্ষিক স্বাভাবিক হলো।শব্দটি অনেকটা খনার বচনের মতো শোনালো।
ঘটনা শেষে একদল বিজ্ঞ আবিষ্কারক ঠিকই জুটলো।যারা সাধারণ তাদের কেউ আবিষ্কারকদের জ্ঞান কথা না কিনে নিজেরাই সমঝদারির চেষ্টা করেছিলো।

এরপর আবার একবার বিগ্রহ টলে উঠলো।আগুন জ্বলে উঠলো ঘ্রাণে।ফুসমন্তরে গাছের পাতাগুলি খানিক নীল হলো, খানিকটা লাল।দূর্যোগে প্রত্যেকেই পালিয়ে বাঁচলো।বিদূষকদের পাথর বইয়ে আনা নিরীহ দেহগুলি জমা হলো মাটির নীচে।সকলেই মন্ত্রবলা ভাঁড়টিকে পাল্লা দিয়ে খুঁজতে লাগলো।তার ধর্ম?সংশয় ভণিতার আকাল?ব্যস!শুরু হলো শোরগোল। ঝাঁপির নকশাটা নাকি একজনের চোখে জায়নামাজের কারুকার্যের মতো লেগেছিলো।কারুর মতে,শেষ লাইনটি ছিলো বাইবেলের ! অগত্যা বাকি ঘটনাটিও...! কেউ বলেছিলো না,লোকটি পুরোটাই মহাভারতের যুদ্ধের কথা বিড়বিড় করেছিলো। তাদের এই গোলযোগের ভিতর প্রকৃত  অনুসন্ধানটি চাপা পড়ে গেল।এরপর ঘটলো কান্ডটা!মানবিক বিগ্রহ টলতে টলতে মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো প্রকৃত সত্য।একটি বিশাল কদাকার সাপ লণ্ডভণ্ড করতে লাগলো ফনা তুলে!বিষের ভাঁটায়, নিষ্পাপ মানুষগুলোও মরে যাচ্ছে।এরপর মনে পড়লো ভাঁড়টির কথা-
নিশ্চয় ও ব্যাটা মন্ত্র দিয়ে সাপটিকে বশে রাখছিলো!কেউ কেউ ভাঁড় না বলে সাপুড়ে বললো। নিঁখোজ চাবিতে ভাগ্যশিষ্যরা প্রতিকার করতে পারলো না।পৃথিবীর চরম অসুখের দিনের আগেই নিনাদকারী অজাত কালভৈরব, সাবধান করতে এসেছিলো।কোনোরকম বুজরুকি বা উজবুকতা নয়।

শৈশবে ঘুমন্ত সাপটির দেহে গড়ে ওঠা ধর্মস্থানটি একদা কালজয়ী হয়ে উঠেছিলো।তার লেজের ডগা বাড়তে থাকায় অদৃষ্টের জয়গান করে, বৃদ্ধি পাচ্ছিলো সিঁড়ির ধারাপাত।মাঝের অংশটি কোনো কারণে চাপা পড়ে যায়।  অতএব, জীবন্ত সাপটির লেজ ও মস্তক বাদে গোটা শরীরটি মাটির স্তর -বেদীর তলায়!
সর্পমস্তকটি এতদিন বিগ্রহ রূপে ভূষিত ছিলো-সেই নামাঙ্কে বহু উপহাস, জটলা ঘনীভূত হয়েছে।একদিন না একদিন, সত্যটা আসতোই।লোভাতুর ধর্মস্থান বনাম স্বার্থ সংগ্রাম এবং তাদের আপেক্ষেই এই বিস্তর টানাপোড়েন!নিভৃতে পরিকল্পিত হাসি হেসে মূর্ছা গেলেন অন্তর্যামী।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন