কেশব মেট্যা'র কবিতা
কোথাও গান নেই। হুম। উল্লাস।
গাছপালা কমলেও কমছে না জঙ্গল।
ভেতরে ভেতরে ঝোপঝাড়। গোপন বোঝাপড়া।
বিড়াল ঘুরছে। এদিক ওদিক।
যারা ঘন্টা বাঁধবে বলে বাড়ি ছেড়ে বাইরে গেল,
তারা বিড়াল হয়ে ফিরে আসছে।
উঁকি মারছে বাঘের মতো।
কোথাও গান নেই।
শুধুই ঝোপঝাড়। গোপন বোঝাপড়া।
বিড়ালনামা-২
বিড়ালের লাফ।
তোমার মাথায় চিন্তা।
রান্নাঘর মনে করাচ্ছে মাছ;
মাছ কিছুই মনে করছে না। মরা মাছ।
কড়াইতে গরম তেল ফুটছে
লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠছে গাল, মাছের।
এসব মুগ্ধতা বিড়াল জানে না,
শুধু সুযোগ বোঝে।
বিড়ালনামা-৩
রাজনীতি আজকাল দৈত্যের মতো চেপে বসে
সাধারণের পেশীতে।
অসাধারণ অঙ্গুলি হেলনে
মানুষ
রাস্তা বাঁধে
আবার রাস্তা কাটেও।
এই রাস্তা কাটার গল্পে হিরো হয়েছে তেখালি ব্রিজ–
আর হিরোইন নন্দীগ্রামের কলতলা।
মানুষ রাস্তা কাটে রাজনীতির কালো ছায়ায়।
আর বিড়াল কাটলে, ডেঞ্জার।
ইতিহাস ভূগোল ভুলে সব্বাই কষে ব্রেক!
বিড়ালনামা-৪
রিসেপশন সেরে বাড়ি ফেরে তারা;
রঙিন আলোয় কত কিছু ঢাকা পড়ে যায়।
রাত দুটো
বিছানা ভর্তি ফুল
ফুলশয্যা।
জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ে। সাদা ধবধবে।
চাঁদ নয়... চাঁদ নয়...
একটা বিড়াল।
মেঝেতে বমি করে।
গরগর করে। হঠাৎ হঠাৎ।
বউ ভাবে– পূর্ব প্রেমিক তার
মদ খেয়ে কষ্ট ভুলতে চায়।
বর ভাবে–পূর্ব প্রেমিকা নাকি
পেটে কি তবে সত্যি কিছু...
রাত বাড়ে।
হাততালি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে চাঁদ।
একটা ফুলসাজানো খাট সারারাত জেগে থাকে চুপচাপ!
কলঙ্ক
সমুদ্রে গিয়েছিলাম।
চরাচর জুড়ে দুধসাদা জলরাশিকে
জ্যোৎস্না ভেবে,
চাঁদ খুঁজেছি চাঁদ...।
ঢেউয়ে যারা বেদনা ভাসাতে যায়–
কী নিয়ে ফেরে হে বালুর দেশ?
কৃষ্ণবর্ণে ফিরে এলাম রাধে
কলঙ্ক খুঁজলে না যে!
ফু-১
বাতাস অ্যাডমিশন নিয়েছে। কলেজে।
অন্ধকারে অনার্স।
এত দীর্ঘ তার সিলেবাস,
সে ঝড় হয়ে ফিরে আসে।
ফু-২
যারা সমুদ্রে ঢেউ মাখতে যায়
বাতাসকে অগ্রাহ্য করে কি?
সেও নারী এক
তছনছ করে– নতুবা বিলি কেটে দেয়।
দিনযাপন-৯
ঘুড়ি। লাট খাচ্ছে। আমিও।
শৈশব ফুরিয়ে আসছে ক্রমশ...
ফুরোবার পথ নেই আজকাল,
হদিশ পেলেও
হাততালি নেই।
হাতে জড়িয়ে আছে ষড়যন্ত্র...
পায়ের নীচে ফাঁদ,
ঘুম...
দিনযাপন-১০
কী দারুণ সম্মোহিত করেছ আমায়,
ঘুম এলো। সত্যি ঘুম।
বহুবছর পর...
কার হাতে হাত রাখছি,
সরিয়ে দিচ্ছি কার ঠোঁট...
বুঝতেই পারছি না
জানতেও কি চাইছি...
ঘাম গড়িয়ে যাচ্ছে
উপর থেকে নীচ
উপুড় থেকে চিৎ।
আলো জ্বালালো কে
হঠাৎ!
আয় ঘুম আয়
মিথ্যে মিথ্যে ঘুম,
আর ভাঙবে না
অনেক বছর।
যাদুকর রিলিফ চাইছে কেন? রিলিফ।
যাদুকরও রিলিফ চায়..রিলিফ!
দিনযাপন-১১
সহজভাবেই যাকে পাওয়ার ছিল...
হারিয়েছি কি সহজভাবেই?
কাছে যে আসছে
গায়ে তার দ্বিধা,
জড়িয়ে আছে আবেশ...
আমার চোখ ছোটো হয়ে আসছে
কেন...?
মন নীচের দিকে গড়িয়ে গেলে,
ছোটো হয়ে যায় বুঝি চোখও!
সহজভাবেই যাকে পাওয়ার ছিল...
দেখি হারায়নি
হারায় না তা সহজে।
দিনযাপন-১২
কলঙ্ক কুড়োচ্ছি দিনরাত।
পরিচিত অভিমান আর নেই...
কূল জুড়ে শুধুই লাল চক্ষু, ঝড়ের আভাস।
রাঙিয়া উঠিল দিনমান...
ভাঙিয়া পড়িল আকাশকুসুম।
রক্তমাংসের মনুষ্য কম্পন খুঁজতে গিয়ে দেখি–
ঘুম ভেঙে দাঁড়াচ্ছে দেওয়াল।
দেওয়ালে দেওয়ালে... বিষাদডানার ঢেউ।
দেওয়াল জাগছে...
জাগছে না মানুষের মতো কেউ!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন